Connect with us

অনুপ্রেরণার কবিতা

আলো-আঁধারের জীবন: একটি মনস্তাত্ত্বিক ও সমাজবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ

Published

on

আলো-আঁধারে জীবন-কবিতার-পিকচার

ছুটি
মিজানুর রহমান

 

(আলো-আঁধারের জীবন)

রজনী ফুরিয়ে যাবে আঁধার হবে ম্লান;
উদ্ভাসিত হবে দিনের আলো

জাগিবে নতুন প্রান।
সে আলোয় যখন থাকে না কোনো

উষ্ণ রবির ঝিলিক;
আকাশপানে তাকালে দেখি

পড়িছে মেঘের হিড়িক।
অবনীর বুকে ভেদিয়া উঠে

যখন কোনো প্রান;
আলো- আধাঁরের নির্মম খেলায়

গায় না সে আর গান।
মেঘের আধাঁরে লুটায়ে পড়ে

লক্ষ কোটি প্রান;
জীবনটাকে ফিরিয়ে দিতে

একটি আলোর সোপান।
যৌবনকালেই বৃদ্ধ হয়ে রয়েছে পড়ে যারা;
তারা সবাই অন্তিমকালে হয়েছে সর্বহারা।
ভিক্ষা কিংবা দয়া দিয়ে নয়তো জীবন গড়া;
সংগ্রাম করে বাঁচতে শিখো তবেই পাবে ধরা।
ভূবন ঘিরে মেঘ করেছে

নেই তো আলোর ছায়া;
জীবন টা যে আধাঁরে হারাবে

থাকবে না তার মায়া।
হঠাৎ করেই ত্বরিৎ মাঝি দিয়ে যাবে উকি;
বলে যাবে আজ তোমাদের জীবন থেকে ছুটি।



ভূমিকা

“রজনী ফুরিয়ে যাবে আঁধার হবে ম্লান…”—এই চরণ  দিয়ে শুরু কবিতাটির আলো-আঁধারের দ্বন্দ্বের মাধ্যমে আশা-হতাশার চক্র,জীবনের সংগ্রাম,মানবিক অস্তিত্বের জটিলতা ফুটিয়ে তোলে।

মানব অস্তিত্বের প্রতিটি কোণে লুকিয়ে আছে আলো-আঁধারের জীবন, যা আমাদের আত্মবিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন করে গড়ে তোলে।

প্রকৃতির রূপক ব্যবহার করে কবি মানব জীবনের গতিপথকে ব্যাখ্যা করেছেন, মেঘের আধাঁর ও আলোর সন্ধান যেখানে সমান্তরালভাবে চলমান।


কবিতার কাঠামো ও  মূল প্রতিপাদ্য

এই কবিতাটি চারটি স্তবকে বিভক্ত,আলো-আঁধারের জীবন দ্বন্দ্বের নতুন মাত্রা প্রতিটি স্তবকে যোগ করা হয়েছে:

১.প্রাকৃতিক রূপক: রজনী-দিনের পরিবর্তন, মেঘের হিড়িক।

২.মানবিক সংগ্রাম: অবনীর বুকে ভেদিয়া উঠে যখন কোনো প্রাণ_”—জীবনের উত্থান-পতন।

৩.সামাজিক বাস্তবতা: যৌবনেই বৃদ্ধ হওয়া,ভিক্ষা বা দয়ার পরিবর্তে সংগ্রামের আহ্বান।

৪.অস্তিত্বের প্রশ্ন:“হঠাৎ করেই ত্বরিৎ মাঝি দিয়ে যাবে উঁকি…”—মৃত্যুর অনিবার্যতা।
জীবন মানেই সংগ্রাম,সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকতে হয়,তাই বলা যায় আলো (আশা) এবং আঁধার (বাঁধা) একে অপরের সহচর।


  সমাজবৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট

  ১.আলো-আঁধারের রূপক

– মেঘের আধাঁর সমাজের “অসমতা, দুর্নীতি বা রাজনৈতিক অস্থিরতা”-কে নির্দেশ করে।বিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষ তাদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

সেই প্রসঙ্গেই “মেঘের আধাঁর”—রূপকার্থে সমাজে বিরাজমান বৈষম্য, দুর্নীতি ও অস্থিরতার প্রতিচ্ছবি।

-“একটি আলোর সোপান…” পঙ্‌ক্তিটি সমাজে পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে বোঝায়।

সমাজের বৈষম্য, দুর্নীতি ও অস্থিরতার  পরিবর্তন আনতে মানুষের সক্রিয়তাই যথেষ্ট।

২. মৃত্যুর চেতনা

-“ত্বরিৎ মাঝি” কথাটি এক্সিস্টেনশিয়াল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক, যেখানে মৃত্যু অনিবার্য—তবুও তা মানুষকে জীবনের গভীর অর্থ খুঁজে পেতে উৎসাহিত করে।

মৃত্যু বরণের চিন্তা মানুষকে নতুন করে বেঁচে থাকার প্রেরণা দেয়।


সাহিত্যিক প্রেক্ষাপট

– রবীন্দ্রনাথের “আলো-আঁধার”দ্বন্দ্বের সাথে সাদৃশ্য: “আলো যার নেই আজি, আঁধার তাহারি সাজি…” (গীতাঞ্জলি)।

– জীবনানন্দ দাশের মেলাঙ্কোলিয়া: “আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে…”—যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক গভীরভাবে জড়িত।


কবিতার রচনাকাল:

আলো-আঁধারের জীবন একটি অন্তরঙ্গ ইতিহাস,২০২০ সালের লকডাউন আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একা একা দেখতাম কীভাবে শহরের আলোগুলো একে একে নিভে যাচ্ছে, আর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে মানুষের আশা।

বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলাম একজন রিকশাচালকের গল্পে, যার চোখের জল-ভেজা কথাগুলো আমাকে ভীষণ রকম তাড়া করতে লাগল। “সারাদিন হাঁটলাম, একটা ভাড়াও পেলাম না, ঘরে বাচ্চার ক্ষুধার চিৎকার শুনতে পাচ্ছি”তার এই গভীর কথা গুলো এবং করোনার মুহূর্ত গুলো নিয়ে এক একটা শব্দ দিয়ে এই কবিতার জন্ম।

২০২০ সালের এক অমাবস্যার রাতে “রজনী ফুরিয়ে যাবে আঁধার হবে ম্লান”এই চরণটি লিখতে আমার হাত কাঁপছিল, এটি শুধু মাত্র কবিতাই নয়, আমার ব্যক্তিগত সংগ্রাম ও লক্ষ মানুষের অকথিত গল্পের দলিল।


পাঠকের জন্য চিন্তার খোরাক

  • ১.সত্যিই কি সংগ্রাম জীবনের একমাত্র পথ, নাকি সমাজের বাঁধাগুলো দূর করাও প্রয়োজন?
  • ২.আপনার জীবনের “মেঘের আধাঁর” কী? কীভাবে তা অতিক্রম করবেন?
  • ৩.মৃত্যু-চিন্তা কি আপনাকে আসলেই বাঁচার নতুন অনুপ্রেরণা দেয়?

একজন পাঠকের মন্তব্য

“এই কবিতাটি প্রথম পড়ার সময় মনে হয়েছিল—এ যেন আমারই না বলা কথাগুলোকে কেউ কালি দিয়ে লিখে দিয়েছে। বিশেষ করে ‘মেঘের আধাঁরে লুটায়ে পড়ে লক্ষ কোটি প্রাণ’—এই লাইনটি পড়ে আমার চোখে জল এসে গেল।আমার স্বামী প্রবাসী আজ তিন বছর হয়েছে,আমি একজন গ্রামীণ নারী।

প্রতিদিনের সংগ্রাম, অসহায়ত্ব আর সমাজের নীরবতা আমাকে কখনো কখনো ভাবায়,’জীবন কি শুধুই এই আঁধার?’ কিন্তু কবিতার শেষের দিকে ‘একটি আলোর সোপান’ কথাটি আসলেই আমাকে আশা দেয়। একদিন আলো ফুটবেই,আজও বিশ্বাস করি,।”

মন্তব্য করুন:

  • এই কবিতা পড়ে আপনি কি শিখলেন আমাদের ফেইজবুক পেইজ “নব যুগের কাব্য” গিয়ে জানাতে ভুলবেন না,আপনার একটা মন্তব্য ফলে হয় তো কেউ আশার আলো খুঁজে পাবে।

সমাপ্তি: আলোর সন্ধানে

কবিতাটির শেষ চরণটি “বলে যাবে আজ তোমাদের জীবন থেকে ছুটি”- শুধু মাত্র মৃত্যু বরণই,বরং এটা একটি “অ্যাকশনের ডাক”।সংগ্রাম ছাড়া জীবন অর্থহীন,সংগ্রাম করে ঠিকে থাকার মাধ্যমেই জীবন অর্থময় হয়ে উঠে।এই কবিতাটি লিখার সময় আমার অনুভব হল যে আমি এটা শুধু সাদা কাগজের উপর কলম দিয়ে লিখছি নাহ,আমি বরং সেই সব মানুষের অন্তরে লিখে যাচ্ছি যারা অন্ধকারে আশার আলোর জন্য হাতড়াচ্ছে”।

“বলে যাবে আজ তোমাদের জীবন থেকে ছুটি”-কবিতার শেষ চরণটি জীবনে গভীর অর্থ বয়ে আনে।মৃত্যু অনিবার্য যেকোনো মুহুর্তে আসতে পারে,তাই মৃত্যুর ভয় জয় করাই জীবনের আরেক নাম।

অতএব,কবিতা হল একটা দর্পণের ন্যায় যেখানে সমাজ নিজেকে দেখতে পায়,কখনো খারাপ,কখনো ভালো,কিন্তু দর্পণ যা দেখায় তা সর্বদা সত্য-এই বিশ্বাস নিয়েই ‘আলো-আঁধারের জীবন’ কবিতার প্রতিটি শব্দের জন্ম।

অতঃপর,আঁধার কখনোই চিরস্থায়ী হয় না,অন্ধকার কাটিয়ে দিন শেষে ঠিকি সূর্য উদিত হয়-শর্ত হল আপনি তার জন্য প্রস্তুত তো?


📌ডিসক্লেইমার:এই ব্লগপোস্টে ব্যবহৃত সমস্ত বিশ্লেষণ শুধুমাত্র শিক্ষামূলক ও সাহিত্যিক আলোচনার উদ্দেশ্যে উপস্থাপিত।উদ্ধৃত কবিতাংশ গুলি শুধুমাত্র উদাহরণস্বরূপ ব্যবহৃত হয়েছে। অনুমতিবিহীন পোস্টের কোন অংশ কপি করা  আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ।

অনুপ্রেরণার কবিতা

বিরহের কবিতা – একাকিত্বে ডুবে থাকা ভালোবাসার আর্তি

Published

on

বিরহের-কবিতা-pic

 “চলে গেলে, তবুও থেকো”

তামান্না রহমান

 

তুমি চলে গেলে, ভেঙে দিলে সব,
অন্তরের ঘরে আজ শুধু নিঃশব্দ ধ্বনি।
একটি একটি করে স্মৃতির পাতা উল্টাই,
প্রতিটি পৃষ্ঠায়—তুমি, আর আমি।

তোমার চোখে একদিন ছিল স্বপ্ন,
আজ সেই চোখ অন্য কারো দিকে।
আমার হৃদয় পড়ে থাকে মৃদু বাতাসে,
যেখানে তুমি ফিরে আসো না আর।

চিঠির বাক্সে পড়ে আছে ভালোবাসা,
তুমি ছিঁড়ে ফেললেও শব্দগুলো রয়।
ভালোবাসা কি এতটাই নড়বড়ে ছিলো,
যে একটা আঘাতে সব ফুরিয়ে গেল?

চাঁদ আজও জ্বলছে আকাশে—
তবে সে আলো আর উষ্ণ নয়।
তোমার অনুপস্থিতি এক শূন্যতা,
যেখানে কেবল আমার অন্তর কাঁদে।

ভালোবাসি কখনো বলবো না আর,
কারণ ভালোবাসা কাঁদতে শেখায়।
তবুও, কোথাও যেন অপেক্ষা করি,
তুমি ফিরবে বলে—তোমার প্রতিক্ষায়।


বিরহের কবিতা: প্রেম হারানোর পরও ভালোবাসা থাকে বেঁচে


মূলভাব (Summary)

এই বিরহের কবিতা এক একাকিত্বের চিত্র। প্রিয়জনের অনুপস্থিতিতে হৃদয়ের ভেতরে বেজে ওঠা নিঃশব্দ সুর।

চিঠির বাক্সে পড়ে থাকা ভালোবাসা, চাঁদের শীতল আলো, আর প্রতীক্ষার যন্ত্রণায় ডুবে থাকা ভালোবাসার প্রতিটি স্তর এখানে প্রকাশ পেয়েছে।

এটা কেবল একটি কবিতা নয়—এটা এক আত্মার আর্ত

 

ভালোবাসা যেমন মিলনের আনন্দ, তেমনি বিরহের যন্ত্রনাও এক গভীর অনুভব।কারো চলে যাওয়া, স্মৃতির পাতায় রেখে যায় অবিনশ্বর ছাপ।

এই কবিতাটি এমনই এক হৃদয়স্পর্শী গল্প বলেছে—যেখানে প্রিয়জন চলে গেছে, কিন্তু তার ছায়া রয়ে গেছে অন্তরের প্রতিটি কোণে।


তুমি চলে গেলে, আর আমি রইলাম নিঃশব্দ অভিমানে

কবিতার শুরুতেই অনুভব করি এক প্রচণ্ড শূন্যতা। “তুমি চলে গেলে, ভেঙে দিলে সব”—এই পংক্তিতে লুকিয়ে আছে ভাঙনের ভয়াবহতা।

একজন প্রিয়জনের চলে যাওয়া শুধু শরীরী অনুপস্থিতি নয়, তা আত্মার রক্তক্ষরণ। সেই নিঃশব্দ ঘরে প্রতিটি দেয়াল যেন ফিরে ফিরে বলে—তুমি ছিলে।


স্মৃতির পাতায় তুমি এখনো আছো

“একটি একটি করে স্মৃতির পাতা ওল্টাই, প্রতিটি পৃষ্ঠায়—তুমি, আর আমি”—এই লাইন দুটো স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, ভালোবাসা হারালেও তার স্মৃতি কখনো হারায় না।

প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কিছু অনুভব, কিছু না বলা কথা। কবিতাটি সেই অনুভবগুলোকে রঙহীন করে তোলে না, বরং জীবন্ত করে তোলে প্রতিটি স্মৃতিকে।


ভালোবাসা কি সত্যিই এত ঠুনকো?

চিঠির বাক্সে পড়ে থাকা ভালোবাসা যেন অমর। যদিও প্রিয়জন ছিঁড়ে ফেলেছে সেই চিঠি, কিন্তু শব্দগুলো থেকে যায় হৃদয়ে।

কবি প্রশ্ন রাখেন—”ভালোবাসা কি এতটাই ঠুনকো ছিলো, যে একটা দিনেই সব ফুরায়?”

এই প্রশ্নটিই আসলে বিরহের কবিতার মূল ব্যথা—যেখানে প্রিয়জন ভুলে গেলেও ভালোবাসার মানুষটি ভুলতে পারে না।


চাঁদ আলো দেয়, কিন্তু সে আলো আর উষ্ণ নয়

“চাঁদ আজও জ্বলছে আকাশে—তবে সে আলো আর উষ্ণ নয়”—এই চিত্রকল্পে কবি দেখিয়েছেন, পৃথিবী যেমন আগের মতই চলে, তবে যার হৃদয়ে ভালোবাসা ভাঙে, তার কাছে পৃথিবীর সবকিছুই বদলে যায়।

চাঁদের আলো আর প্রেমিকের হৃদয় গরম করে না, কারণ প্রিয়জন এখন অন্য কারো দিকে তাকায়।


একতরফা প্রতীক্ষা আর ভালোবাসা

“ভালোবাসি বলেও বলবো না আর”—এখানে আত্মসম্মান এবং নিঃশব্দ প্রতিবাদ একসাথে মিশে আছে।

ভালোবাসা কাউকে কাঁদাতে শেখালে, সে ভালোবাসা আর বলা চলে না।

তবুও, কবি বলেন—”কোথাও যেন অপেক্ষা করি”—এ এক নিঃশব্দ আশা। হয়তো প্রিয়জন কোনো একদিন ফিরে আসবে—একটি ছোট্ট ভুলে।


উপসংহার

বিরহের কবিতা শুধু কিছু শব্দ নয়, এটি এক নীরব যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি। ভালোবাসা যেমন হৃদয়কে আলোয় ভরিয়ে তোলে, তেমনি তার বিচ্ছেদ হৃদয়ের গভীরে আঁচড় কাটে।

এই কবিতায় সেই নিঃসঙ্গতা, সেই কষ্টের চিত্র ধরা পড়েছে—যেখানে কেউ আর ফিরে আসে না, কিন্তু ভালোবাসা থেকে যায় চিরকাল।

আমরা যারা ভালোবেসেছি, তারাই জানি বিরহ কতটা গভীর হতে পারে। এই কবিতা যেন তাদেরই কণ্ঠস্বর, যারা আজও স্মৃতির পাতায় একজনকে খুঁজে ফেরে।

তাই এ কবিতা শুধু পড়ার জন্য নয়, অনুভবের জন্য।

আপনার যদি এমন কোনো হৃদয়ভাঙা স্মৃতি থাকে, তবে এই কবিতা হয়তো আপনারই জীবনের প্রতিচ্ছবি।

ভালোবাসা থাকুক সুন্দরভাবে, আর বিরহ হোক কবিতার ভাষায় অমর।

Continue Reading

অনুপ্রেরণার কবিতা

“তবু আমি একা – নিঃসঙ্গ হৃদয়ের নীরব আর্তনাদ”

Published

on

তবু-আমি-একা-কবিতার-পিক

” তবুও একা”

মিজানুর রহমান

 

সবাই আছে চারিপাশে তবু আমি একা,
কেটে গেল অপেক্ষার প্রহর পেলাম না কারো দেখা।
ভেবেছিলাম আজ আসিবে কেহ দরজায় দিবে নাড়া,

দরজার পানে কান পেতে থাকি পাইনি কারো সাড়া।
আশার ঘোরে দিন কেটে গেল আসলো না তো কেউ,
নিমন্ত্রণের চিঠি দিয়ে ডাকলো না তো কেউ।
কোন পথে যে চলবো আমি সকল পথ ই বাঁকা,
পাইনা খুঁজে পথের দিশা তাই তো আমি একা।


তবুও একা – একাকীত্বের কবিতা

ভূমিকা: একাকীত্ব এক অদৃশ্য যন্ত্রণা

জীবনের প্রতিটি বাঁকে আমরা নানা রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই।

কখনও ভালোবাসা পাই, আবার কখনও সেই ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়। ঠিক তখনই শুরু হয় একাকীত্বের যাত্রা।

“সবাই আছে চারিপাশে তবু আমি একা”—এই একটি বাক্যেই যেন ধরা পড়ে অগণিত মানুষের জীবনের অস্পষ্ট এক সুর, যা হৃদয়ের গভীরে দীর্ঘশ্বাস হয়ে জমে থাকে।

এই লেখায় আমরা বিশ্লেষণ করবো এমন এক কবিতা যা আমাদের চিরচেনা একাকীত্বের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।

সেইসাথে আমরা জানবো কেন এই একাকীত্বের কবিতা পাঠকের মনে এতটা সাড়া জাগায়।


মূলভাব: নিঃসঙ্গতার কাব্যিক ছায়া

এই কবিতাটি নিছক শব্দের ছন্দ নয়; এটি একাকীত্বের অশ্রুজল। প্রতিটি চরণ যেন মানুষের অন্তর্দহনের এক একটি পর্দা খুলে দেয়।

কবি বুঝিয়ে দিয়েছেন—ভিড়ের মাঝেও একজন মানুষ কতটা নিঃসঙ্গ হতে পারে।

বন্ধুরা থাকে, আত্মীয়েরা পাশে থাকেন, তবুও হৃদয়ের ফাঁকা জায়গাটা কেউ ভরাতে পারে না। এই অনুভবই কবিতার মূল স্পন্দন।

কবিতায় “দরজায় দিবে নাড়া”—এই লাইনটি বোঝায় কারো আসার অপেক্ষা। কিন্তু বাস্তবে কেউ আসে না।

এটি শুধু কবির একার নয়, অসংখ্য পাঠকের জীবনের বাস্তবতা।

অনেকেই এমন অপেক্ষা করেন, যা কখনও পূর্ণ হয় না। কবি সেই অস্ফুট প্রতীক্ষার চিত্র এক সহজ অথচ হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন।


একাকীত্বের কবিতা কেন পাঠকের হৃদয় ছোঁয়

১. ব্যক্তিগত সংযোগ সৃষ্টি করে:
যারা একাকীত্বে ভোগেন, তারা এই ধরণের কবিতায় নিজেদের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পান। ফলে মানসিক প্রশান্তি ও সাহচর্যের অনুভব জন্ম নেয়।

২. চিরন্তন মানবিক অনুভূতি:
একাকীত্ব মানুষের জন্মগত আবেগের অংশ।

প্রেমহীনতা, বঞ্চনা বা সমাজের অবহেলায় এই অনুভব আরও গভীর হয়।

৩. কবিতার ভাষার সারল্য:
এই কবিতার সৌন্দর্য এর সরলতায়। কোনো জটিল শব্দ নেই, তবুও হৃদয় ছুঁয়ে যায়।


একাকীত্ব থেকে মুক্তির উপায়

এই ধরণের একাকীত্বের কবিতা পাঠের মাধ্যমে অনেকে মানসিক প্রশান্তি পান।

কারণ কবিতা যেন একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু, যার কাছে আপনি নিজের কষ্ট উজাড় করে দিতে পারেন।

তবে বাস্তবে, এই নিঃসঙ্গতা কাটাতে দরকার—

  • আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার
  • সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ
  • নতুন বন্ধু তৈরি
  • পরিবার বা প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো

কবিতা হতে পারে সেই প্রেরণার উৎস, যা আপনাকে আবার হাসতে শেখায়, ভাবতে শেখায়—জীবন থেমে যায় না, কেউ না কেউ আপনার অপেক্ষায় আছেন।


উপসংহার: শব্দের গভীরে একা মানুষের আর্তনাদ

“তবুও একা” কেবল একটি কবিতা নয়—এটি একটি জীবনদর্শন, একটি অন্তর্জগতের প্রতিচ্ছবি।

যারা একাকীত্বে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি এক উষ্ণ আলিঙ্গনের মতো।

কবিতা আমাদের শেখায়—যদিও আমরা একা অনুভব করি, আসলে আমরা একা নই।

কেউ না কেউ, কোথাও না কোথাও, ঠিক এই অনুভবটাই বয়ে বেড়াচ্ছেন।

এই ধরণের একাকীত্বের কবিতা আমাদের শেখায়, নিঃসঙ্গতার মধ্যেও সৃষ্টি সম্ভব, ভালোবাসা সম্ভব।

আর এই শব্দই হয়ে উঠতে পারে আপনার পরবর্তী অনুপ্রেরণা।

Continue Reading

অনুপ্রেরণার কবিতা

“নারীর আত্মপরিচয়: রূপের ছাঁচ নয়, আত্মার শক্তিই নারীর আসল পরিচয়”

Published

on

পুরুষের দৃষ্টিতে নারী

তামান্না রহমান

 

হ্যাঁ, আমি নারী।
তোমার নিখুঁত চোখে হয়তো অসম্পূর্ণ,
কারণ আমার গাল দাগহীন নয়,
গায়ে নেই দুধে-আলতা মাধুর্য।
আমার চুল কোমর ছোঁয় না,
চোখে নেই হরিণী টান—
তবু এ চোখে জমে আছে শত শতাব্দীর জীবনের জলছবি।

তুমি চেয়েছিলে শিক্ষার আভায় দীপ্তময় এক নারী,
নম্রতা, ভদ্রতা আর কোমলতার প্রতিমূর্তি।
আমি তা-ও নই, আমি সংযমের ছায়া নই,
আমি উত্তরের আগুন।
আমার কণ্ঠে জন্ম নেয় প্রতিবাদ,
ভদ্রতার মুখোশে ঢাকা আবেগের অভিনয় নয়।

তোমার চোখে আমি কলঙ্কিনী—
কারণ আমার শরীরে দাগ আছে,
মেদের আস্তরণে লুকিয়ে আছে অভিজ্ঞতার আলপনা।
তুমি বোঝো না,
এই দাগ—নতুন প্রাণ জন্মদানের চিহ্ন,
এই মেদ—অসীম সহ্যশক্তির ফল।

আমি তোমার কাঙ্ক্ষিত সৌন্দর্যের প্রতিমা নই,
আমি শরীর না, আত্মার আর্তি।
রূপকথার রাজকন্যা নই—
আমি রক্তমাংসের বাস্তবতা।

তুমি যাকে এড়িয়ে যাও,
সে-ই তোমার ঘর গড়ে তোলে,
তোমার ক্লান্ত দুপুরে জলের মতো শান্তি আনে।
আর তুমি শুধু খুঁজে ফিরো এক অলীক প্রতিমা—
যা কখনও বাস্তব হয় না,
শুধু থাকে কল্পনার খাঁচায় বন্দী।


 


নারীর আত্মপরিচয়: সমাজের চোখে নয়, নিজের মানদণ্ডে

নারীর সৌন্দর্য কি কেবল বাইরের রূপে মাপা যায়?

এই প্রশ্নটাই যেন ছুঁয়ে যায় কবিতাটির প্রতিটি চরণে।

একজন নারী তার নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন সমাজের প্রতিষ্ঠিত সৌন্দর্যের ধারণার বিপরীতে।

তাঁর গাল দাগহীন নয়, চুল কোমর ছোঁয় না, চোখে নেই হরিণী টান।

কিন্তু এই চাহনিতে লুকিয়ে আছে শত জীবনের গল্প, অভিজ্ঞতার জলছবি।

তিনি সেই নারী, যিনি বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতিমা নন, বরং আত্মার গভীরতা নিয়ে বেঁচে থাকা এক সাহসী মানুষ।

সমাজের চোখে নারী কি কেবল নম্রতার প্রতিচ্ছবি?

সমাজ চায় এক শিক্ষিত, নম্র, ভদ্র ও কোমল নারী। কিন্তু এই কবিতার নারী বলেন, তিনি সংযমের ছায়া নন, তিনি উত্তরের আগুন।

তাঁর কণ্ঠে আছে প্রতিবাদের শক্তি, আছে আবেগের সাহসী প্রকাশ। তিনি ভদ্রতার মুখোশে ঢাকা আবেগ নন—তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতায় গড়া জীবন্ত আত্মা।

শরীরের দাগ নয়, এই তো জীবনধারণের গর্ব

এই কবিতায় নারীর শরীরের দাগ আর মেদকে দেখানো হয়েছে গর্বের প্রতীক হিসেবে।

সমাজ যেখানে এগুলোকে কলঙ্ক ভাবে, সেখানে কবিতার নারী জানিয়ে দেন—এই দাগ এক নতুন প্রাণের জন্মদানের স্মৃতি।

এই মেদ অসীম সহ্যের প্রতীক।

এগুলো লুকানোর কিছু নয়, বরং এগুলোই নারীর আসল পরিচয়ের অংশ।

নারী রূপকথা নয়, বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি

নারী কেবল রূপকথার রাজকন্যা নয়, বরং রক্তমাংসের এক জীবন্ত সত্তা।

তিনি কল্পনার খাঁচায় বন্দী কোনো নিখুঁত প্রতিমা নন।

সমাজ যাকে এড়িয়ে চলে, সেই নারীই ঘর গড়ে তোলে, ক্লান্ত দুপুরে শান্তির জলের মতো পাশে থাকে।

অথচ পুরুষ খুঁজে ফেরে এক অলীক সৌন্দর্য, যা বাস্তবে কখনও পাওয়া যায় না।

নারীর আত্মপরিচয়: নিজের চোখে নিজের গুরুত্ব

এই কবিতা নারীর আত্মপরিচয়ের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। সমাজ যেভাবে নারীকে দেখতে চায়, তার বাইরে গিয়ে নারী নিজেকে নিজের চোখে মূল্যায়ন করেন।

তিনি নিজেই তাঁর পরিচয়ের নির্মাতা।

সৌন্দর্য, ভদ্রতা কিংবা রূপের মাপকাঠি দিয়ে নয়, বরং আত্মার শক্তি, অভিজ্ঞতা ও প্রতিবাদী মন দিয়ে তিনি নিজের পরিচয় খুঁজে নেন।


 

Continue Reading
বৃষ্টির-কবিতা-বাংলা-pc
Uncategorized3 weeks ago

“বৃষ্টির কবিতা বাংলা | কদম ফুলের স্মৃতি ও হৃদয়ছোঁয়া পদ্য”

কোরবানির-প্রকৃত-অর্থ-pc
Uncategorized3 weeks ago

“কোরবানির প্রকৃত অর্থ কি? ইসলামে আত্মত্যাগের মহিমা”

আষাঢ়ে-অপেক্ষা-পিক
Uncategorized4 weeks ago

আষাঢ়ে অপেক্ষা কবিতা | বৃষ্টির স্মৃতিতে এক হারানো প্রণয়ের আখ্যান

টক্সিক-রিলেশনশিপ-কবিতা-pc
Uncategorized1 month ago

টক্সিক রিলেশনশিপ কবিতা | সম্পর্কের নীরব যন্ত্রণা ও বিচ্ছেদের অনুভূতি

ভালোবাসা-নাকি-স্বার্থপরতা-pic
Uncategorized1 month ago

“ভালোবাসা নাকি স্বার্থপরতা? – আধুনিক সম্পর্কের গভীর বিশ্লেষণ”

ঋতুভিত্তিক-কবিতা-pc
Uncategorized1 month ago

“ঋতুভিত্তিক কবিতা: প্রকৃতির ছন্দে ভালোবাসার ছয়টি পর্ব”

ভাঙনের-শব্দহীনতা-pc
Uncategorized1 month ago

ভাঙনের শব্দহীনতা: একটি অন্তর্বেদনার কবিতা বিশ্লেষণ”

রাজত্ব-কবিতা-pc
Uncategorized1 month ago

“রাজত্ব কবিতা: বিদ্রোহ, ন্যায় ও মানবতার গভীর বিশ্লেষণ”

কটাক্ষের-জবাব-pc
জীবনচক্র1 month ago

“কটাক্ষের জবাব: আমি এক পিস্ আত্মমর্যাদা ও অদম্য মনোবলের পদ্য”

রবের-প্রতি-ভালোবাসা-pc
কবিতার রাজ্য1 month ago

রবের প্রতি ভালোবাসা – ইসলামিক হৃদয়স্পর্শী কবিতা

Title

Trending