সৃজনশীলতা
স্মৃতির ডায়রি: কবিতায় বাঁধা সময়ের গহীন ছায়া ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

স্মৃতির ডায়রি
মিজানুর রহমান
(স্মৃতির ডায়রি)
কত যতনে বাঁধা স্মৃতি,মায়ার অদৃশ্য আঁচলে,
গোপনে সুরভিত ছায়া,
কিছু সময়ে সে জীবনে ফিরে আসে মৃদু স্বরে।
পুরনো অ্যালবামের পাতায়, জমে থাকা ছবি,
হাসি, চোখের জল—যা ছলিয়ে যায়,
সময়ের গভীরে হারানো ধ্বনি।
ডায়রির পাতায় লেখা, না বলা শত কথা,
অথবা ভাঙ্গা কোন চিরন্তন স্বপ্নের চিহ্ন—
যা হারিয়ে যায় সময়ের অন্ধকারে।
পুরনো স্মৃতি চাপা পড়ে সেলফের এক কোণে,
তবুও নয়ন মেললে, কোথাও কিছু দেখা যায় না,
ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যায়, শত ব্যস্ততার ভেতরে।
উদাস দিনের শেষ প্রহরে, যখন সময় থেমে যায়,
মনে পড়ে সে স্মৃতির ঝড়,
এলোমেলো হয়ে ওঠে সব,
যেন ঝরঝরে বাতাসে ভাসে।
হৃদয়ের গভীরে অশান্ত ঢেউ তোলে,
এভাবে হারানো মুহূর্তগুলো ফিরে আসে,
জীবনানন্দ দাশের মতো— স্নিগ্ধ চেতনার মতন,
শান্ত অন্ধকারে।
সময়ের বিস্ময়ে হারিয়ে যায় সমস্ত কিছু,
তবুও স্মৃতিগুলো—
অভ্রান্ত, অগোচরে, মনের গভীরে থেকে যায় চিরকাল।
স্মৃতির ডায়রি: মনের অজস্র গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি
ভূমিকা:
মানুষের মনের সবচেয়ে নিগূঢ় কোণে স্মৃতি লুকিয়ে থাকে।স্মৃতি কখনো একটি প্রিয় গন্ধ,কখনো একটি প্রিয় গানের সুর,আবার কখনো একটি পরিচিত মুখ হয়ে আমাদের অতীতের দরজায় কড়া নাড়ে।স্মৃতির ডায়রি কবিতাটি বৃষ্টি ভেজা এক সন্ধ্যায় লিখেছিলাম,পুরোনো ছবির অ্যালবামের পাতা যখন উল্টাচ্ছিলাম।চোখে পড়ে গেল হঠাৎ দীর্ঘদিনের পুরোনো একটা ছবির দিকে – যাদের সাথে এখন আর দেখা হয় না,কিন্তু একটা সময় প্রচুর আড্ডা হত,তাদের হাসি আজ আটকে আছে ফ্রেমের মধ্যে।স্মৃতির ডায়রি কবিতা’য় আমি তুলে ধরতে চেয়েছি আতীতের স্মৃতি কীভাবে সময়ের আড়ালে থেকে আমাদের বর্তমানে হানা দেয়,আমাদের আবেগকে কীভাবে নাড়া দেয়।
একটি আশ্চর্য ক্ষমতা থাকে মানুষের স্মৃতিশক্তিতে।মানুষের মস্তিষ্কে সাধারণত খারাপ (দুঃখের) স্মৃতিকে ভালো (আনন্দের) স্মৃতির তুলনায় তীব্রভাবে ও দীর্ঘ সময়ের জন্য ধরে রাখে।কিন্তু কেন গভীর ভাবে কিছু স্মৃতি গেঁথে থাকে আমাদের সত্তায়?এ সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই কবিতার পঙক্তিগুলো জন্ম নিয়েছে।
কবিতার গভীর বিশ্লেষণ:
১.শব্দচয়ন ও উপমা
স্মৃতির ডায়রি কবিতায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কিছু ব্যবহৃত শব্দচয়ন ও উপমা:
মায়ার অদৃশ্য আঁচলে:এখানে মায়াবী শক্তির সাথে স্মৃতিকে তুলনা করা হয়েছে।যেমন- মায়া জগৎ বেঁধে রাখে অদৃশ্য শক্তিতে,স্মৃতিও তেমনি অদৃশ্য সুতো দিয়ে আমাদের বেঁধে রাখে।এই কবিতায় কবি শ্রুতিস্মৃতি ধারণাকে তুলে ধরেছেন।মস্তিষ্ক মানুষের কন্ঠস্বরকে (শব্দ, বাক্য, টোন) অল্প কিছু সেকেন্ড সংরক্ষণ করতে পারে।কিন্তু কবি বলেছেন,সময়ের গভীরেও কিছু কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয়।
হৃদয়ের গভীরে অশান্ত ঢেউ: স্মৃতি মাঝেমধ্যেই আবেগের সুনামি নিয়ে আসে অপ্রত্যাশিতভাবে।অতীতের মানুষটি বর্তমানে না থাকলেও কখনো কখনো তার স্মৃতি হৃদয়ের গভীরে অশান্ত ঢেউ তুলে,যাকে কবি আবেগের সুনামি বলেছেন।
২.জীবনানন্দীয় প্রভাব:
জীবনানন্দ দাশের স্নিগ্ধ মেলাঙ্কোলিয়ার ছাপ এই কবিতায় স্পষ্ট:
-অন্ত্যমিলহীন কিন্তু ছন্দোময় পংক্তি
– প্রকৃতির উপাদান (ছায়া, ঝড়, ঢেউ)
– সময়ের ধারণা নিয়ে খেলা
জীবনানন্দ দাশ তাঁর “বনলতা সেন” কবিতায় বলেছিলেন,”চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা”।এখানেও অতীতের অন্ধকার থেকে কবি স্মৃতিকে উদ্ধার করেছেন।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:
একটি ব্যক্তিগত ঘটনা এই কবিতাটি লিখার পিছনে কাজ করেছিল।সময়টা ২০২০ সাল তখন লকডাউনের কারণে সব কিছু বন্ধ ছিল,সময় কাঁটানোর জন্য আমি বাবার পুরনো ডায়রিগুলো ঘাঁটছিলাম।সেখানে ১৯৮৯ সালে লেখা একটি চিঠির খসড়া পেয়ে গেলাম।যেখানে আমার জন্মের প্রতীক্ষায় থাকার অনুভূতি তিনি লিখে ছিলেন।স্নেহ ও আবেগ মাখা সেই লেখায় ছিল-“আকাশে আজ হাল্কা বৃষ্টির পরে রংধণুর সাতটি রং দেখা যাচ্ছে হয়তো নতুন কেউ আসছে বলে।”
হঠাৎ করেই এই একটি লাইন পড়ে বহু বছর আগের সেই মুহূর্তটা আমার মস্তিষ্কে ভিডিওর মতো চলে এল।
এটাই স্মৃতির অদ্ভুত শক্তি – এটি শুধু অতীত নয়, বর্তমানকেও অর্থ দেয়।
পাঠকদের জন্য প্রশ্ন ও সংলাপ:
-আপনার জীবনের সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত কোন স্মৃতি?
-আপনাকে অতীতে নিয়ে যায় কোন কোন গন্ধ বা সুর?
-আপনি কি বিশ্বাস করেন যে কিছু স্মৃতি আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে দমন করি?
- একজন পাঠকের মন্তব্য:
“আপনার কবিতার ‘ডায়রির পাতায় লেখা’ লাইনটি পড়ে মনে পড়ে গেল আমার স্কুল জীবনের পুরনো ডায়রির কথা।সেখানে আমি আমার জীবনের প্রথম প্রেমের কথা লিখে ছিলাম।সে এখন অস্ট্রেলিয়ায় জীবন-যাপন করছে।আজ পুরনো সেই ডায়রির পাতায় হাত বুলালে গায়ে কাঁটা দেয়।”
- আপনার মূল্যবান মন্তব্য– কমেন্ট কিংবা ইনবক্স করে জানান আমাদের ফেইসবুক পেইজ:নব যুগের কাব্য’তে।
আপনার লিখা ভালো লাগলে প্রকাশ করা হবে অন্য কোন কবিতায়।
সমাপ্তি:
স্মৃতির ডায়রি এই কবিতাটা লিখার সময় আমি উপলব্ধি করেছি,আসলে আমরা আমাদের স্মৃতির সমষ্টি।সকল প্রকার স্মৃতি যদি মানুষ হারিয়ে ফেলে,তবে মানুষের ব্যক্তিত্বই বদলে যায়।
এই কবিতার শেষ লাইন – “হৃদয়ের গভীরে অশান্ত ঢেউ তোলে” -এটা আমাদের সবার জন্যই সত্য।প্রতিনিয়ত আমরা নতুন নতুন স্মৃতি তৈরি করছি,যা কখনো না কখনো আবার জীবনে ফিরে আসবে।হয়তো কোনো বদল ও দিনে, পুরনো কোন গানের সুরে, বা অচেনা কোন মানুষের হাসিতে
“স্মৃতির ডায়রি কবিতাটি পাঠকের হৃদয়ে জীবন্ত করে তোলে অতীতের হারানো মুহূর্তগুলোকে,যেখানে স্মৃতির গভীরে অমলিন হয়ে থাকে ডায়রির পাতায় লেখা প্রতিটি শব্দ”।
স্মৃতির ডায়রি শুধু মাত্র কবিতা নয়, এটি যুগের সাথে জীবন যাত্রার একটি মানচিত্র।
📌ডিসক্লেইমার:এই বিশ্লেষণে উপস্থাপিত সকল তথ্য ও মতামত শুধুমাত্র শিক্ষামূলক ও আলোচনামূলক উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়েছে।শৈল্পিক ব্যাখ্যাগুলি রূপক, বিজ্ঞানের প্রতিস্থাপন নয়।অনুগ্রহ করে এই কন্টেন্টের কোনো অংশ অনুমতি ছাড়া কপি বা পুনঃপ্রকাশ করা নিষিদ্ধ।

সৃজনশীলতা
স্বার্থান্বেষী মানুষ: সমাজের মুখোশ খুলে দেওয়া বাস্তব জীবনের চিত্র

” মানুষ”
মিজানুর রহমান
সৃষ্টিকর্তার সেরা সৃষ্টি আজব এক জাতি,
সারাক্ষণ ই ব্যস্ত থাকে ছিঁড়তে স্বজনপ্রীতি।
নিজের বেলায় গুণের ভান্ডার, দোষের নাই তো লেষ;
খানিক সুতো খুঁজে পেলেই চড়কি ঘুরায় বেশ।
কেউ বা করে পরোপকার মাথায় রেখে হাত,
কেউ বা আবার পরণিন্দায় থাকে দিবা-রাত।
পরচর্চায় কেউ বা করে নিজের স্বার্থ হাসিল,
কেউ বা আবার দুই পাখি মারে ছুড়ে একটি ঢিল।
স্বার্থান্বেষী হয়ে সবাই মিটায় মনের সাধ,
ভুলে যায় সবাই রক্তের স্রোতে যায় না দেয়া বাঁধ।
এমনি করে যায় পেরিয়ে মাসের পরে বছর,
একটা সময় বাঁধন ছেড়ে হয়ে যায়রে পর।
নিজ খেয়ালে উড়ায় সবাই মনের রঙিন ফানুস,
সৃষ্টিকর্তা সেরা সৃষ্টি’র নাম দিয়েছেন মানুষ..!!!
স্বার্থান্বেষী মানুষ কবিতা: এক নির্মম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি
কবিতার পরিচিতি
“মানুষ” শিরোনামে লেখা এই কবিতাটি বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি।
এখানে মানুষ নামক শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব, আত্মস্বার্থপরতা এবং সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে।
মানুষ কীভাবে স্বজনপ্রীতি, পরনিন্দা ও স্বার্থের জালে আটকে পড়ে—এই কবিতায় তা অনুপম ছন্দে তুলে ধরা হয়েছে।
মূল ভাবনা: স্বার্থের জালে বন্দি মানুষ
স্বার্থান্বেষী মানুষ কবিতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমরা কীভাবে নিজেদের স্বার্থকে বড় করে দেখি।
কারো ভালো করতে গিয়ে যদি নিজে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়, তাহলে সেই ভালোবাসা আর থাকে না।
এই আত্মকেন্দ্রিকতা ধীরে ধীরে আমাদের মানবিকতা নষ্ট করে দিচ্ছে।
স্বজনপ্রীতির বৃত্তে মানুষ
“সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকে ছিঁড়তে স্বজনপ্রীতি।”
এই পংক্তি বুঝিয়ে দেয়, মানুষ নিজের স্বজন বা পরিবারের কাছেও স্বার্থ খোঁজে।
আত্মীয়তার সম্পর্কে যেখানে ভালোবাসা থাকার কথা, সেখানে চলছে নিজের লাভের হিসাব।
সমাজের মূলে থাকা বিশ্বাস ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে এই মানসিকতার কারণে।
গুণের ঢাক, দোষের কাঁধে বোঝা
“নিজের বেলায় গুণের ভাণ্ডার, দোষের নাই তো লেষ।”
এখানে কবি ইঙ্গিত দিয়েছেন এক নির্মম বাস্তবতার দিকে।
আমরা নিজের ভুল স্বীকার করি না, অথচ অন্যের সামান্য ভুলকে বড় করে দেখি। introspection বা আত্মসমালোচনার অভাব আমাদের স্বার্থপর করে তোলে।
পরচর্চা ও পরনিন্দার বিষাক্ততা
“পরচর্চায় কেউ বা করে নিজের স্বার্থ হাসিল।”
সমাজে এমন মানুষ আছে যারা অন্যের দুর্বলতা খুঁটে নিজের লাভের পথ খোঁজে।
পরনিন্দা শুধু একজনকে ছোট করে না, এটি সম্পর্কের মধ্যে বিষ ঢেলে দেয়।
এই স্বভাব এক বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করে, যা সমাজে দূরত্ব তৈরি করে।
সমাজের দ্বিমুখী চিত্র
স্বার্থান্বেষী মানুষ’কে দুটি ভাগে ভাগ করেছে:
- নিঃস্বার্থ মানুষ – যারা ভালো কাজ করে চুপচাপ।
- স্বার্থপর মানুষ – যারা সব সময় নিজের লাভ খোঁজে।
এই দ্বিমুখী বাস্তবতা সমাজের প্রতিদিনের ঘটনা। ভালো মানুষও কখনও কখনও স্বার্থপরদের চাপে থেমে যেতে বাধ্য হয়।
স্বার্থান্বেষী মানুষ:সময়ের সাথে সম্পর্কের পরিবর্তন
“এমনি করে যায় পেরিয়ে মাসের পরে বছর, একটা সময় বাঁধন ছেড়ে হয়ে যায়রে পর।”
এই পংক্তিতে কবি সময়ের সাথে সম্পর্কের অবক্ষয়কে তুলে ধরেছেন। এক সময় যেসব সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ ছিল, স্বার্থ ফুরালে সেগুলো একেবারে অচেনা হয়ে যায়। এই বাস্তবতা সবাইকেই একবার না একবার অনুভব করতে হয়।
রঙিন ফানুসের মতো মানুষ
“নিজ খেয়ালে উড়ায় সবাই মনের রঙিন ফানুস।”
এই লাইনটি মানুষের স্বপ্ন ও কল্পনার জগৎকে বোঝায়। মানুষ নিজের ইচ্ছা আর স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ছুটতে মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলে। ফলে একে অপরের উপর নির্ভরতা ও আস্থা কমে যায়।
সৃষ্টির সেরা জীব
মানুষ সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেও, বর্তমান সমাজে স্বার্থান্বেষী মানুষদের আধিপত্য স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়
মানব আশরাফুল মাখলুকাত।কিন্তু বর্তমান সমাজে মানুষে মানুষে এতো কোলাহল যা দেখে মনে হয় না মানুষ সৃষ্টি সেরা।
মানব কারো ভালো দেখতে পারে না,সামনা সামনি ভালো সাজার অভিনয় করলেও পিছনে বসে কিভাবে অন্যের খারাপ করবে সেই চিন্তায় মগ্ন থাকে।
কখনো যদি কারো উপকার কর তারপর যদি কোন একটা কারণে ক্ষতি হয়ে বসে তখন পিছনের সব কথা ভুলে তোমাকে দোষারোপ করবে।এইটাই হল সৃষ্টির সেরা জীবের বৈশিষ্ট্য।
কবিতায় চিত্রায়িত হয়েছে এমন এক জাতির কথা, যারা নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে সম্পর্কের বাঁধন ছিঁড়ে দেয়।
তারা কখনো স্বজনপ্রীতির নামে, কখনো আবার পরনিন্দা কিংবা কুৎসা রটনার মাধ্যমে সমাজকে বিভ্রান্ত করে।
উপসংহার
স্বার্থান্বেষী মানুষ কবিতা একটি সামাজিক দিকনির্দেশনা। এখানে মানুষ নামক জীবটির দ্বৈততা, ভণ্ডামি, এবং আত্মমুখীনতা তুলে ধরা হয়েছে।
এই কবিতা আমাদের শেখায়, যদি আমরা নিজেদের ভুল বুঝে পরিবর্তন করতে পারি, তবেই সত্যিকারের মানুষ হওয়া সম্ভব।
এটি এক বাস্তব আয়না, যেখানে সমাজের চেহারা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। কবি বোঝাতে চেয়েছেন, সম্পর্ক ক্ষণস্থায়ী হতে পারে কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ চিরস্থায়ী হওয়া উচিত। আত্মসমালোচনা ও সচেতনতা এই কবিতার মূল বার্তা।
পাঠকের জন্য বার্তা
এই কবিতা আমাদের আত্মসমালোচনার সুযোগ করে দেয়। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে মানুষ হতে চাই, তবে আমাদের স্বার্থপরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মানবিক গুণাবলিই একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষ করে তোলে। ভালোবাসা, সহানুভূতি ও নিরপেক্ষতা থাকলেই সমাজ সুন্দর হয়।
সৃজনশীলতা
ভালোবাসার বিচ্ছেদ | বিচ্ছেদের বুকে জমে থাকা ভালোবাসা

বিদায়ের আলোছায়া
তামান্না রহমান
(ভালোবাসার বিচ্ছেদ)
আছো কেমন?
দিব্যি ভালো!
নতুন করে স্বপ্ন দেখ?
দেখার মতো নেই যে আলো!
তোমার আলো কোথায় হারালো?
অন্ধ করে যে পালালো।
আমায় কেনো ভুল বুঝলে?
তুমি কি নিভুল ছিলে?
ভুলত আমার অল্প ছিল!
হুম..মিথ্যা প্রেমের গল্প ছিল।
বাসতাম তোমায় সত্যি ভালো!
তাই বুঝি ফেলে পালালে?
বেকার মানুষ তাই তো তখন;
আর থাক বলতে হবে না এখন।
সত্যি তোমায় বেসেছিলাম ভালো
বেকার বলে ছাড়তে হল?
আমি ছিলাম নিরূপায়!
ছেড়ে দিয়ে পেয়েছ তো উপায়?
সে সব কথা থাকনা পড়ে;
হুম..ধূলোপড়া পুরনো চ্যাপ্টারে।
সংসার জীবন কেমন চলে?
তুমি যেমন চেয়েছিলে।
বড্ড পরিবর্তন তোমার মাঝে;
তোমার জীবন কেমন চলে?
আছি ভালো সব মিলিয়ে!
সেটাই তো থাকার কথা।
হা হা ভালো থাকি চাওনা বুঝি?
চাওয়ার মতো কি বা বুঝি?
অনেক কিছু বুঝতে তখন।
সেই তখনটা নেই তো এখন।
আমার কথা মনে পড়ে?
আচ্ছা আমি এখন আসি!
সংসার নিয়ে ব্যস্ত বুঝি?
এসব শুনার কি প্রয়োজন?
আচ্ছা তুমি থাকো ভালো।
বিদায় বেলায়ও বলে ছিলে।
চাই তো ভিষণ ভালো থাকো!
তাই তো আজ এমন হলো।
নিজের প্রতি খেয়াল রেখো!
মেয়ের স্কুল ছুটি হল।
তাহলে এখন যাচ্ছো চলে।
আজীবনের জন্য তো ছেড়ে ছিলে।।
ছাড়তে চাইনি তখন আমি!
মিথ্যা আজও বলছ তুমি।
পারলে আমায় ক্ষমা করো!
বিধাতার কাছে চেয়ে নিও।।।
কবিতার মূলভাব:ভালোবাসার স্মৃতি ও বিচ্ছেদ এর কবিতা
১. ভালোবাসার স্মৃতি ও বিচ্ছেদ
ভালোবাসার স্মৃতি ও বিচ্ছেদ জীবনের এক চিরন্তন গল্প। কিছু ভালোবাসা রয়ে যায় শুধু হৃদয়ের কোণে। কিছু সম্পর্ক মুছে গেলেও তার ছায়া পড়ে থাকে মনে। এই কবিতায় সেই হারানো ভালোবাসা ও তার ভাঙনের যন্ত্রণা উঠে এসেছে এক নিঃশব্দ কথোপকথনের মাধ্যমে।
২. অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক
প্রেমিক বলে—সে সত্যিই ভালোবাসত, কিন্তু বেকারত্বের কারণে সে সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেনি। সম্পর্কের মাঝে তখন দারিদ্র্য ছিল, সঙ্গী ছিল না স্থিরতা। প্রিয়জন তাকে ছেড়ে চলে যায়, আর সেই ক্ষত রয়ে যায় চিরকাল।
৩. অতীত ভালোবাসার স্মৃতি আর বর্তমান জীবনের ব্যবধান
প্রেমিকা এখন সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তার জীবনে এসেছে পরিবর্তন। কথক দেখে—তাকে ছাড়া সবকিছু চলেছে ঠিকঠাক। অথচ তার নিজের মধ্যে রয়ে গেছে অতীতের ছায়া, পুরনো স্মৃতির ধুলো পড়া পাতাগুলো।
৪. বিদায় ও ক্ষমার বার্তা এবং ভালোবাসার বিচ্ছেদ
শেষে কবিতার কথক একটি নরম বিদায়ের সুরে কথা বলে। সে জানায়, সে ভুল বোঝেনি, বরং আজও ভালোবাসে। ক্ষমা চায়—যদি কোনোদিন কষ্ট দিয়ে থাকে। বিদায় জানিয়ে বলে, “নিজের প্রতি খেয়াল রেখো”, ঠিক যেমন ভালোবাসার শেষ ইচ্ছা হয়।আজীবনের জন্য দুটি মানুষ আলাদা আলাদা পথ বেঁকে গেল।শুধু হৃদয়ে রয়ে গেল ভালোবাসার স্মৃতি ও বিচ্ছেদ এর যন্ত্রণা।
শেষ কথা
ভালোবাসার স্মৃতি কখনও পুরনো হয় না,তা সময়ের গহীনে স্নিগ্ধ আলোর মতো জ্বলতে থাকে।সেই মধুর মুহূর্তগুলিই হয়ে ওঠে একাকীত্বের অবলম্বন,যখন বিচ্ছেদের ব্যথা চেপে বসে বুকের গভীরে।
ভালোবাসা হারিয়ে গেলেও তার ছায়া রয়ে যায় হৃদয়ের আঙিনায়,প্রতিটি নিশ্বাসে, প্রতিটি নির্জনতায়।
বিচ্ছেদ আমাদের কাঁদায়, ভেঙে দেয়, কিন্তু শেখায় —
ভালোবাসা কখনো মুছে যায় না, বদলে যায় শুধু তার রূপ।
শেষ পর্যন্ত, স্মৃতিই হয়ে থাকে ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর আশ্রয়।
সৃজনশীলতা
বাঙালির বৈশাখ: প্রাণের উৎসব ও সংস্কৃতির রঙে রাঙানো ঋতু

বৈশাখের আগুন
মিজানুর রহমান
বৈশাখ, তুমি ঝড়ের হাওয়া, আগুনের ফুলকি,
মাটির বুকে জাগিয়ে দাও জীবনের ধুকপুকি।
শিমুল-পলাশ রাঙা হয়ে ফোটে তোমার ডাকে,
গ্রামের পথে হিল্লোলে মাতে নতুন সুরের বাঁকে।
হাওরে দোলে নৌকার মাঝি, গায় বাউলের গান,
বৈশাখ, তুমি বাঙালির বুকে, নতুন প্রাণের প্রাণ।
মঙ্গল শোভায় মেতে ওঠে গাঁয়ের হাটবাজার,
মেলার ধুলোয় মিশে যায় হাসি, নাচে রঙিন ষাড়।
হালখাতার পাতায় লেখা নতুন দিনের হিসাব,
বৈশাখ, তুমি জাগাও মনে অপার সম্ভাব।
গ্রীষ্মের তাপে পুড়লেও মন, তুমি দাও ছায়ার সুখ,
কৃষকের ঘামে, কবির কলমে, জন্ম নেয় নতুন রুপ।
বৈশাখ তুমি চির জাগ্রত, তুমি প্রাণের ঢেউ,
বাঙালির রক্তে বয়ে চলো তুমি, বাঁধা দিবে না কেউ।
এসো তবে, নতুন বছরে আলোর ডাক নিয়ে,
বৈশাখ, তুমি ছড়িয়ে দাও প্রেম, শান্তির পরশ দিয়ে।
তোমার রোদে, তোমার ছায়ায়, ফুটুক ফুলের হাসি,
বাংলার মাটি, বাংলার মানুষ, থাকুক চির উচ্ছ্বাসী।
কবিতার মূলভাবঃ
ভূমিকা: বৈশাখের আবাহন
বৈশাখ বাঙালির জীবনে এক নতুন সূর্যোদয়ের নাম। এই কবিতায় বৈশাখকে প্রাণের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
ঝড়, আগুন, ফুলকি, আর নতুন আশার বার্তায় বৈশাখ বাঙালির মনে সৃষ্টি করে প্রাণচাঞ্চল্য।
প্রকৃতির রূপে বৈশাখ
শিমুল-পলাশের রাঙা রঙে ফুটে ওঠে বৈশাখের রূপ। গ্রামের পথে হাওয়ার ঝাপটায় সুরের ঢেউ নামে।
বৈশাখ যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে এক অদ্ভুত রঙের ছোঁয়া দেয়। বাউল গানের সুরে, নৌকার দোলায় বাঙালি ফিরে পায় তার শিকড়ের টান।
মেলা ও উৎসবের প্রাণবন্ততা
বৈশাখ মানেই উৎসব। গাঁয়ের হাটবাজারে মঙ্গল শোভাযাত্রা আর ষাঁড় নাচে আনন্দের জোয়ার বইয়ে দেয়।
মেলামেশায় মিলিয়ে যায় শহর-গ্রামের ভেদাভেদ। মানুষের মুখে হাসি, পায়ে নাচ। বৈশাখ আসে শান্তি আর আনন্দের আহ্বান নিয়ে।
নতুন বছরের নতুন সূচনা
হালখাতা খুলে নতুন দিনের হিসাব শুরু হয় বৈশাখে। পুরনো ভুল আর ক্লান্তিকে সরিয়ে জীবন পায় নতুন দিশা। বৈশাখ বাঙালির মনে সম্ভাবনার আলো জ্বেলে দেয়।
কৃষক ও কবির চোখে বৈশাখ
প্রচণ্ড গ্রীষ্মেও বৈশাখ দেয় ছায়ার স্বস্তি। কৃষকের ঘামে জন্ম নেয় সোনালী ফসল। কবির কলমে উঠে আসে নবজাগরণের ভাষা। বৈশাখ শুধু ঋতু নয়, বৈশাখ হলো সৃষ্টির স্পন্দন।
বাঙালির চেতনায় বৈশাখ
বৈশাখ বাঙালির রক্তে গাঁথা। সে চির জাগ্রত, চির নবীন। তাকে কেউ রুখে রাখতে পারে না। সে আসে বারবার, ভালোবাসা আর শান্তির বার্তা নিয়ে।
উপসংহার: বৈশাখ মানেই ভালোবাসা
শেষে কবি আহ্বান করেন, বৈশাখ যেন ছড়িয়ে দেয় প্রেম ও শান্তির পরশ। তার রোদে ফুটুক নতুন সম্ভাবনার ফুল। বাংলার মাটি আর মানুষ থাকুক চির উচ্ছ্বাসী, বৈশাখের মতোই নবীন ও চিরসবুজ।
-
কবিতার রাজ্য2 months ago
সময় বড্ড দামী- দেওয়া মানেই কি ভালোবাসার গুরুত্ব?
-
কবিতার রাজ্য2 months ago
“অবিচ্ছিন্ন ভালোবাসা: সম্পর্কের এক অনন্য দার্শনিকতা”
-
সৃজনশীলতা2 months ago
নিখোঁজ ভালোবাসা – একাকিত্বের আধুনিক অভিধান
-
রোমান্টিক সাহিত্য2 months ago
“রাগ ও ভালোবাসার দ্বন্দ্ব: একটি আত্মনিবেদিত প্রেমের পদ্য”
-
অনুপ্রেরণার কবিতা2 months ago
একদিন এসো সময় করে – প্রেমের অপেক্ষার কবিতা
-
সৃজনশীলতা2 months ago
হৃদয়স্পর্শী বাংলা কবিতা | স্মৃতির অনামিকা ধরে এক প্রেমযাত্রা
-
সৃজনশীলতা2 months ago
ভালোবাসার বিনিময়ে হৃদয় | একটুকরো অকৃত্রিম ভালোবাসার সন্ধানে
-
অনুপ্রেরণার কবিতা2 months ago
ভালোবাসার চোখে কবিতার জন্ম হয় | প্রেম চির স্বগীয় সুখ