বিদায়ের আলোছায়া

তামান্না রহমান

(ভালোবাসার বিচ্ছেদ)

আছো কেমন?
দিব্যি ভালো!
নতুন করে স্বপ্ন দেখ?
দেখার মতো নেই যে আলো!
তোমার আলো কোথায় হারালো?
অন্ধ করে যে পালালো।

আমায় কেনো ভুল বুঝলে?
তুমি কি নিভুল ছিলে?
ভুলত আমার অল্প ছিল!
হুম..মিথ্যা প্রেমের গল্প ছিল।
বাসতাম তোমায় সত্যি ভালো!
তাই বুঝি ফেলে পালালে?

বেকার মানুষ তাই তো তখন;
আর থাক বলতে হবে না এখন।
সত্যি তোমায় বেসেছিলাম ভালো
বেকার বলে ছাড়তে হল?

আমি ছিলাম নিরূপায়!
ছেড়ে দিয়ে পেয়েছ তো উপায়?
সে সব কথা থাকনা পড়ে;
হুম..ধূলোপড়া পুরনো চ্যাপ্টারে।
সংসার জীবন কেমন চলে?

তুমি যেমন চেয়েছিলে।
বড্ড পরিবর্তন তোমার মাঝে;
তোমার জীবন কেমন চলে?
আছি ভালো সব মিলিয়ে!
সেটাই তো থাকার কথা।
হা হা ভালো থাকি চাওনা বুঝি?
চাওয়ার মতো কি বা বুঝি?
অনেক কিছু বুঝতে তখন।
সেই তখনটা নেই তো এখন।

আমার কথা মনে পড়ে?
আচ্ছা আমি এখন আসি!
সংসার নিয়ে ব্যস্ত বুঝি?
এসব শুনার কি প্রয়োজন?
আচ্ছা তুমি থাকো ভালো।
বিদায় বেলায়ও বলে ছিলে।
চাই তো ভিষণ ভালো থাকো!
তাই তো আজ এমন হলো।
নিজের প্রতি খেয়াল রেখো!

মেয়ের স্কুল ছুটি হল।
তাহলে এখন যাচ্ছো চলে।
আজীবনের জন্য তো ছেড়ে ছিলে।।
ছাড়তে চাইনি তখন আমি!
মিথ্যা আজও বলছ তুমি।
পারলে আমায় ক্ষমা করো!
বিধাতার কাছে চেয়ে নিও।।।

কবিতার মূলভাব:ভালোবাসার স্মৃতি ও বিচ্ছেদ এর কবিতা

১. ভালোবাসার স্মৃতি ও বিচ্ছেদ

ভালোবাসার স্মৃতি ও বিচ্ছেদ জীবনের এক চিরন্তন গল্প। কিছু ভালোবাসা রয়ে যায় শুধু হৃদয়ের কোণে। কিছু সম্পর্ক মুছে গেলেও তার ছায়া পড়ে থাকে মনে। এই কবিতায় সেই হারানো ভালোবাসা ও তার ভাঙনের যন্ত্রণা উঠে এসেছে এক নিঃশব্দ কথোপকথনের মাধ্যমে।

২. অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক

প্রেমিক বলে—সে সত্যিই ভালোবাসত, কিন্তু বেকারত্বের কারণে সে সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেনি। সম্পর্কের মাঝে তখন দারিদ্র‍্য ছিল, সঙ্গী ছিল না স্থিরতা। প্রিয়জন তাকে ছেড়ে চলে যায়, আর সেই ক্ষত রয়ে যায় চিরকাল।

৩. অতীত ভালোবাসার স্মৃতি আর বর্তমান জীবনের ব্যবধান

প্রেমিকা এখন সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তার জীবনে এসেছে পরিবর্তন। কথক দেখে—তাকে ছাড়া সবকিছু চলেছে ঠিকঠাক। অথচ তার নিজের মধ্যে রয়ে গেছে অতীতের ছায়া, পুরনো স্মৃতির ধুলো পড়া পাতাগুলো।

৪. বিদায় ও ক্ষমার বার্তা এবং ভালোবাসার বিচ্ছেদ

শেষে কবিতার কথক একটি নরম বিদায়ের সুরে কথা বলে। সে জানায়, সে ভুল বোঝেনি, বরং আজও ভালোবাসে। ক্ষমা চায়—যদি কোনোদিন কষ্ট দিয়ে থাকে। বিদায় জানিয়ে বলে, “নিজের প্রতি খেয়াল রেখো”, ঠিক যেমন ভালোবাসার শেষ ইচ্ছা হয়।আজীবনের জন্য দুটি মানুষ আলাদা আলাদা পথ বেঁকে গেল।শুধু হৃদয়ে রয়ে গেল ভালোবাসার স্মৃতি ও বিচ্ছেদ এর যন্ত্রণা।

শেষ কথা

ভালোবাসার স্মৃতি কখনও পুরনো হয় না,তা সময়ের গহীনে স্নিগ্ধ আলোর মতো জ্বলতে থাকে।সেই মধুর মুহূর্তগুলিই হয়ে ওঠে একাকীত্বের অবলম্বন,যখন বিচ্ছেদের ব্যথা চেপে বসে বুকের গভীরে।

ভালোবাসা হারিয়ে গেলেও তার ছায়া রয়ে যায় হৃদয়ের আঙিনায়,প্রতিটি নিশ্বাসে, প্রতিটি নির্জনতায়।
বিচ্ছেদ আমাদের কাঁদায়, ভেঙে দেয়, কিন্তু শেখায় —
ভালোবাসা কখনো মুছে যায় না, বদলে যায় শুধু তার রূপ।
শেষ পর্যন্ত, স্মৃতিই হয়ে থাকে ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর আশ্রয়।

বৈশাখের আগুন

মিজানুর রহমান

বৈশাখ, তুমি ঝড়ের হাওয়া, আগুনের ফুলকি,
মাটির বুকে জাগিয়ে দাও জীবনের ধুকপুকি।
শিমুল-পলাশ রাঙা হয়ে ফোটে তোমার ডাকে,
গ্রামের পথে হিল্লোলে মাতে নতুন সুরের বাঁকে।
হাওরে দোলে নৌকার মাঝি, গায় বাউলের গান,
বৈশাখ, তুমি বাঙালির বুকে, নতুন প্রাণের প্রাণ।
মঙ্গল শোভায় মেতে ওঠে গাঁয়ের হাটবাজার,
মেলার ধুলোয় মিশে যায় হাসি, নাচে রঙিন ষাড়।
হালখাতার পাতায় লেখা নতুন দিনের হিসাব,
বৈশাখ, তুমি জাগাও মনে অপার সম্ভাব।
গ্রীষ্মের তাপে পুড়লেও মন, তুমি দাও ছায়ার সুখ,
কৃষকের ঘামে, কবির কলমে, জন্ম নেয় নতুন রুপ।
বৈশাখ তুমি চির জাগ্রত, তুমি প্রাণের ঢেউ,
বাঙালির রক্তে বয়ে চলো তুমি, বাঁধা দিবে না কেউ।
এসো তবে, নতুন বছরে আলোর ডাক নিয়ে,
বৈশাখ, তুমি ছড়িয়ে দাও প্রেম, শান্তির পরশ দিয়ে।
তোমার রোদে, তোমার ছায়ায়, ফুটুক ফুলের হাসি,
বাংলার মাটি, বাংলার মানুষ, থাকুক চির উচ্ছ্বাসী।

কবিতার মূলভাবঃ 

ভূমিকা: বৈশাখের আবাহন

বৈশাখ বাঙালির জীবনে এক নতুন সূর্যোদয়ের নাম। এই কবিতায় বৈশাখকে প্রাণের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

ঝড়, আগুন, ফুলকি, আর নতুন আশার বার্তায় বৈশাখ বাঙালির মনে সৃষ্টি করে প্রাণচাঞ্চল্য।

প্রকৃতির রূপে বৈশাখ

শিমুল-পলাশের রাঙা রঙে ফুটে ওঠে বৈশাখের রূপ। গ্রামের পথে হাওয়ার ঝাপটায় সুরের ঢেউ নামে।

বৈশাখ যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে এক অদ্ভুত রঙের ছোঁয়া দেয়। বাউল গানের সুরে, নৌকার দোলায় বাঙালি ফিরে পায় তার শিকড়ের টান।

মেলা ও উৎসবের প্রাণবন্ততা

বৈশাখ মানেই উৎসব। গাঁয়ের হাটবাজারে মঙ্গল শোভাযাত্রা আর ষাঁড় নাচে আনন্দের জোয়ার বইয়ে দেয়।

মেলামেশায় মিলিয়ে যায় শহর-গ্রামের ভেদাভেদ। মানুষের মুখে হাসি, পায়ে নাচ। বৈশাখ আসে শান্তি আর আনন্দের আহ্বান নিয়ে।

নতুন বছরের নতুন সূচনা

হালখাতা খুলে নতুন দিনের হিসাব শুরু হয় বৈশাখে। পুরনো ভুল আর ক্লান্তিকে সরিয়ে জীবন পায় নতুন দিশা। বৈশাখ বাঙালির মনে সম্ভাবনার আলো জ্বেলে দেয়।

কৃষক ও কবির চোখে বৈশাখ

প্রচণ্ড গ্রীষ্মেও বৈশাখ দেয় ছায়ার স্বস্তি। কৃষকের ঘামে জন্ম নেয় সোনালী ফসল। কবির কলমে উঠে আসে নবজাগরণের ভাষা। বৈশাখ শুধু ঋতু নয়, বৈশাখ হলো সৃষ্টির স্পন্দন।

বাঙালির চেতনায় বৈশাখ

বৈশাখ বাঙালির রক্তে গাঁথা। সে চির জাগ্রত, চির নবীন। তাকে কেউ রুখে রাখতে পারে না। সে আসে বারবার, ভালোবাসা আর শান্তির বার্তা নিয়ে।

উপসংহার: বৈশাখ মানেই ভালোবাসা

শেষে কবি আহ্বান করেন, বৈশাখ যেন ছড়িয়ে দেয় প্রেম ও শান্তির পরশ। তার রোদে ফুটুক নতুন সম্ভাবনার ফুল। বাংলার মাটি আর মানুষ থাকুক চির উচ্ছ্বাসী, বৈশাখের মতোই নবীন ও চিরসবুজ।

নিখোঁজ
তামান্না রহমান

আমি এক তিল ভালোবাসা চেয়েছিলাম,,
সে অবুঝের মতো পুরো পৃথিবীটা আমার নামে লিখে দিয়ে নিখোঁজ হল।
পুরো পৃথিবীর বদলে যে তাকেই খুব প্রয়োজন ছিল সে আদৌও বুঝেনি।
আমি আকাশে চাঁদটা দেখিয়ে একদিন বলেছিলাম তোমার কাঁধে মাথা রেখে হাটু পানিতে পা ডুবিয়ে নিঝুম রাতে চাঁদ দেখতে চাই,
ভরসা করার মতো কাঁধটা সরিয়ে নিয়ে,,
সে আমাকে একটা নিঝুম রাত আর অশ্রু সিক্ত চোখ দিয়েছিল।

হাঠাৎ একদিন তাকে বলেছিলাম,
জানতো আমার খুব শখ নীল শাড়ি পড়ে তোমার সাথে মাঝ নদীতে ফানুস উড়াব,
সে আমাকে নীল রঙ্গের পাহাড় উপহার দিলো,
ফানুস আজ রোজ উড়ে অন্যের আকাশে, তবে আমার নয়।
তাকে বলেছিলাম আমার হাতটা আজীবন ধরে রেখো খুব যত্ন করে,
সে কখন যে আমার হাতটা ছেঁড়ে দিয়ে অন্যের হাতটা শক্ত করে ধরে নিয়েছিলো,
আমি তার শব্দটুকু অনুভব করার সময়টুকু পাইনি।

তাকে বলেছিলাম তোমাকে কালো পাঞ্জাবিতে বেশ মানায়,
সে মানা না মানার গল্পের ভিড়ে ক্ষণে ক্ষণে নতুন রূপে নিখোঁজ হয়ে যায়।
দিন শেষে আমি তুমি সবাই নিখোঁজ হয়ে যাই,
কাউকে কাঁদিয়ে নয় তো কারো আত্মার মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
তবে নিখোঁজ বর্তা কারো কাছে আসে না।
চুপিসারে এই শহরের সবাই নিখোঁজ হয়ে যায় নতুনত্বের সন্ধানে।
সব কিছুর বিনিময়ে যে সে মানুষটাকেই প্রয়োজন জীবনে,
তা বুঝার বোধগম্যতা হয়ে উঠে না।
নিখোঁজ হওয়াটাই আধুনিক যুগের আধুনিকতা।

উপশিরোনাম: নিখোঁজ ভালোবাসা – একাকিত্বের আধুনিক অভিধান

ভালোবাসার জন্য ছিল শুধু একটুখানি চাওয়া

সব সম্পর্কের শুরুতে মানুষ খুব ছোট ছোট চাওয়া নিয়ে এগিয়ে আসে। কবিতার কণ্ঠস্বরও তেমন – একটিমাত্র ‘তিল’ পরিমাণ ভালোবাসা চেয়েছিলো সে। কিন্তু প্রতিদানে পেয়েছিলো একটি অপ্রত্যাশিত বিস্ময় – এক অবুঝ হৃদয় সমস্ত পৃথিবী তার নামে লিখে দিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। এই নিখোঁজ হয়ে যাওয়াটাই কবিতার কেন্দ্রবিন্দু।

ভালোবাসা নয়, ছিল শুধু তার উপস্থিতি দরকার

যে ভালোবাসা কবি চেয়েছিলো, তার চাইতে বেশি কিছুই পেয়েছিলো সে। কিন্তু একজন মানুষের প্রয়োজন আর উপস্থিতি এক জিনিস নয়। কবি বুঝিয়ে দেন, ভালোবাসা কখনো কখনো পরিমাপে নয়, প্রয়োজনীয়তায় মাপা হয়। ভালোবাসার বদলে যে মানুষটিকে নিজের জীবনে চেয়েছিল, সে আদৌ সেটা বুঝতেই পারেনি।

ছোট ছোট স্বপ্নগুলো আজ কল্পনাতেই রয়ে যায়

নীল শাড়ি, মাঝ নদীতে ফানুস, হাটুপানিতে পা ডুবিয়ে চাঁদ দেখা—এসবই ছিল একেকটা ছোট ছোট স্বপ্ন।

কিন্তু সেই মানুষটির অনুপস্থিতিতে সব স্বপ্নই হয়ে ওঠে অসম্পূর্ণ।

চাঁদ দেখা হয়নি, ফানুস উড়েছে অন্য কারো আকাশে, এবং সে হাত ছেড়ে অন্যের হাত ধরেছে। স্বপ্নগুলো মুছে যায় নিঃশব্দে, রেখে যায় শুধু ব্যথা আর স্মৃতি।

ভালোবাসার ভাষা বুঝতে শেখেনি সে

কবিতায় একাধিকবার ফিরে আসে সেই মানুষটির ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি।

এই নিখোঁজ হওয়াটা কেবল শারীরিক নয়, মানসিকও বটে। বারবার দেখা যায় সে কেবল বদলে যাচ্ছে, নতুন রূপে, নতুন গল্পে।

যে মানুষটি ভালোবাসার ভাষা বুঝতে শেখেনি, তার কাছে ভালোবাসা কেবল এক মোহ।

নিখোঁজ হওয়াটাই এখন আধুনিকতার অংশ

সবশেষে কবি একটি গভীর বার্তা দিয়ে যান—এই যুগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া যেন একপ্রকার আধুনিকতার রূপ নিয়েছে।

কেউ আর দীর্ঘস্থায়ী হয় না, কেউ আর স্থির থাকে না।

সবাই একে অপরকে ফেলে নতুনত্বের খোঁজে এগিয়ে চলে। অনুভূতির কোনো উত্তরাধিকার থাকে না, শুধু অভাব থেকে যায়।

ভালোবাসার চেয়ে মূল্যবান ছিল মানুষটা

এই কবিতার মূল মেসেজ একটাই—ভালোবাসা নয়, একজন মানুষের পাশে থাকা, তাকে বুঝতে পারা, তার ছোট ছোট চাওয়াগুলো অনুভব করা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু মানুষ তা বোঝে না।

যখন বোঝে, তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যায়।

উপসংহার: নিখোঁজ গল্পগুলো আসলে নিখোঁজ থাকে না

এই কবিতা আমাদের শেখায়—ভালোবাসা শুধু বলা নয়, বোঝারও বিষয়। অনুভবের এই অক্ষমতাই মানুষকে মানুষ থেকে দূরে করে দেয়।

নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানে হারিয়ে যাওয়া নয়, বরং সেই ব্যথার সঙ্গে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকা।

এই কবিতার প্রতিটি পঙক্তিতে লুকিয়ে আছে আধুনিক সমাজের নিঃসঙ্গতা, ব্যর্থ সম্পর্ক, আর উপলব্ধির সংকট।