অনুপ্রেরণার কবিতা
ভালো হবার মুখোশ পড়ে থাকে কিছু সংখ্যক মানুষ

“ভালো হবার মুখোশ”
তামান্না রহমান
(ভালো হবার মুখোশ)
মানব-মণ্ডলীর মুখচ্ছবিতে মধুর হাস্যভঙ্গি,
অন্তরে বিষাক্ত কুটিলতা,বাহিরে কল্যাণের ঢঙ্গি।
ছায়ার অন্তঃপুরে কল্পিত সর্বনাশের বীজ,
অপরের ত্রুটিতে উদ্ভাসিত হয় নিজ গৌরবলীলাবিজ।
পারে না স্বীয় দোষখানি অবলোকন করতে,
পরের নিন্দায় রত,কালে কালে বিভ্রান্ত চিত্ত।
মুখে প্রেম, চোখে ছল,অন্তরে স্বার্থের গরল-স্রোত,
সম্মুখে সুধা, পশ্চাতে বিষ,অন্তরে আগ্নিদগ্ধ হুতাশন জ্বালায় ছড়ায় নিকট।
এই মানব নামধারী চরিত্রের অন্তর্লীন পরিচয়,
সময়ের প্রহরে রূপান্তরে ভয়াল পরিণয়।
অপরের দোষে গড়ে নিজ ভাবমূর্তি,
আপন আত্মপ্রবঞ্চনায় আচ্ছন্ন হয় নিত্যই।
নিজেই ভালো, নিজেই অশুভ—এই দ্বৈধেই জীবন নাশ,
স্বপ্নবদ্ধ হৃদয়, জাগরণে পরহিত-বিষের পাশ।
মানুষের অবয়বে পশুত্বের অদৃশ্য আভাস,
আচরণে অনুশোচনাহীন নিষ্ঠুরতার প্রকাশ।
তবু বাঁচে, তবু হেঁটে চলে স্বার্থরঞ্জিত পথের রেখি,
নম্রতার নামে নির্মম, ভালোবাসার নামে এক নির্মোহ লেখি।
উজ্জ্বলতার মুখোশে গোপন কপটতা বিস্তৃত,
অন্যের বেদনাতেই খুঁজে পায় সুখের সম্বলচিত।
মানব চরিত্রের দ্বৈততা:বাহ্যিক মধুরতা, অন্তরস্থ কুটিলতা
ভূমিকা
“অন্তরে বিষাক্ত কুটিলতা,বাহিরে কল্যাণের ঢঙ্গি”—এই চরণটি দিয়ে শুরু কবিতাটি মানুষের দ্বৈত সত্তাকে উন্মোচন করে।বহিরঙ্গে সদাচরণের আড়ালে লুকিয়ে থাকে কপটতা,স্বার্থপরতা ও নিষ্ঠুরতা কবিতার মূল বিষয়।এটি মানব চরিত্রের গভীরে স্তরে প্রবেশ করে,যেখানে মুখোশের নিচে লুকিয়ে থাকে অন্ধকার।
কবিতার কাঠামো ও মূল প্রতিপাদ্য
এই কবিতাটি পাঁচটি স্তবকে বিভক্ত,প্রতিটিতে মানব চরিত্রের দ্বৈত সত্তার নতুন দিক ফুটে উঠেছে:
১|বাহ্যিক ও অন্তর্নিহিত বৈপরীত্য: “মুখে প্রেম,চোখে ছল,অন্তরে স্বার্থের গরল-স্রোত”—মানুষের মুখের কথা ও হৃদয়ের ভাবের পার্থক্য।
২|পরনিন্দা ও আত্মপ্রবঞ্চনা: “পরের নিন্দায় রত,কালে কালে বিভ্রান্ত চিত্ত”—অপরের দোষ খুঁজে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা।
৩|স্বার্থপরতার রূপ: “নিজেই ভালো,নিজেই অশুভ”—মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব।
৪|পশুত্বের আভাস: “মানুষের অবয়বে পশুত্বের অদৃশ্য আভাস”—সভ্যতার চাদরে ঢাকা পশুসুলভ আচরণ।
৫|জীবনের নিষ্ঠুরতা: “ভালোবাসার নামে এক নির্মোহ লেখি”—ভালোবাসা ও নিষ্ঠুরতার সমান্তরাল সহাবস্থান।
প্রধান বার্তা: মানব জাতি তার স্বার্থ ও আত্মপ্রতারণার জালে আবদ্ধ।বহিরাঙ্গে যা দেখায়,ভেতরটা তার সম্পূর্ণ বিপরীত।শামুকের খোলসের মতো মানুষের চরিত্র শক্ত আবরণে ঢাকা থাকে।
চিন্তাশীল দৃষ্টিকোণ
মানব এমন এক বুদ্ধিসম্পন্ন জীব,যে চিরকাল নিজের সীমাবদ্ধতা ভেঙে উচ্চতর অস্তিত্বে অতিক্রম করতে চায়,কিন্তু আত্মকেন্দ্রিক লোভ ও স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাই তাকে বারবার বাঁধা দেয়।
চিন্তা ও অনুভবের বিশ্লেষণ
১.আত্মপ্রবঞ্চনা (Self-Deception)
– “নিজেই ভালো,নিজেই অশুভ”—এই পংক্তি মনে করিয়ে দেয় মানুষ প্রায়ই নিজের দোষত্রুটিকে উপেক্ষা করে অপরের ভুল গুলো খুঁজে স্বস্তি পায়।
২. পরনিন্দার মানসিক গঠন
– “পরের নিন্দায় রত”—পরনিন্দার সময় মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নির্গত হয়,যা অস্থায়ী প্রশান্তি এনে দেয়।
৩.স্বার্থপরতার জৈবিক ভিত্তি
-মানুষের আচরণ মূলত জেনেটিক কোড দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং মানুষ জিনগতভাবে স্বার্থপর। অর্থাৎ,প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন কর্মের পেছনে লুকিয়ে থাকে ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা করার প্রবণতা।
সামাজিক দৃষ্টিকোণ
১.সমাজে মুখোশধারীতা
– “উজ্জ্বলতার মুখোশে গোপন কপটতা”—আধুনিক সমাজে সোশ্যাল মিডিয়া মানুষকে “পরিপূর্ণ জীবন” প্রদর্শনের চাপে ফেলে,যা প্রকৃতপক্ষে একটি ভণ্ডামি মাত্র।
২.নিষ্ঠুরতা ও সভ্যতা
– “মানুষের অবয়বে পশুত্ব”—”সভ্যতার আড়ালে মানুষের মধ্যে যে নিষ্ঠুরতা লুকানো থাকে,তা সবচেয়ে গভীর এবং ভয়ংকর হতে পারে।এই ভাবনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে,সভ্য মানুষই সবচেয়ে নিষ্ঠুর হতে পারে।
সাহিত্যিক প্রেক্ষাপট
– রবীন্দ্রনাথের “চোখের বালি”—বিনোদিনীর চরিত্রে এই দ্বৈত সত্তা ফুটে উঠেছে।
– শেক্সপিয়রের “ম্যাকবেথ”—লেডি ম্যাকবেথের বাহ্যিক শান্তি ও অন্তরের অন্ধকার।
পাঠকের জন্য চিন্তার খোরাক
- ১. কখনো কি আপনি অপরের দোষ খুঁজে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছেন?
২. সমাজে “ভালো মানুষ” হওয়ার চাপ আপনাকে কি মিথ্যা বলতে বাধ্য করে?
৩. মানুষের মধ্যে পশুত্ব কতটা প্রকৃত?
আপনার মূল্যবান মন্তব্য:
- এই কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান আমাদের ফেসবুক পেজ “নব যুগের কাব্য”-এ। আপনার একটি মন্তব্য হয়তো কারো চোখ খুলে দেবে!
কবিতার পিছনের গল্প:
বর্তমান যুগের সমাজ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে যেদিকে তাকাব,সেইদিকেই মাখোশ পড়া ব্যক্তিদের আনাগোনা।মানুষ স্বার্থের জন্য নিজের রক্তের সাথে বেইমানি করে।
শেষ বিকেলে:
২০১৫ সালের বৈশাখ মাসের শেষে দিকে প্রচন্ড রকম গরমে বারান্দায় হাওয়া খাচ্ছিলাম,তখন প্রচন্ডরকম কোলাহল ভেসে আসল,মানুষ যে যেদিক থেকে পাড়ছে ছুটে আসছে।অনেক ক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে আর পারছিলাম না তীব্র চিৎকার চেচামেচি কারণে বসে থাকতে।আমিও কোলাহল এর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।তখন লোক মুখে শুনি বাবার সম্পত্তি ভাগ-ভন্ডন নিয়ে ভাই-ভাই লড়াই,রক্তপাত।
সেই রাতে:
শেষ রাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গে তখনই দিনের ও দৃশ্য কথা মনে পড়ে গেল।যে মানুষ বাঁচে কয় দিন,এই ক্ষনস্থায়ী জীবন নিয়ে আমরা কত যুদ্ধ-বিগ্রহ করে থাকি।মুখোশ পড়ে ভালো মানুষ সাজার আড়ালে অন্যের ক্ষতি করি।আর তখন এসব ভাবনা থেকে এই কবিতার জন্ম।
“ভালো হবার মুখোশ না পড়ে আসুন আমরা ভালো মানুষ হই আগে”
সমাপ্তি: মুখোশের আড়ালে সত্য
“অন্যের বেদনাতেই খুঁজে পায় সুখের সম্বল”—এই শেষ চরণটি আমাদের জাগ্রত করে।মানুষ কি শুধুই স্বার্থের দাস? নাকি এই অন্ধকার থেকে মুক্তির পথ আছে?
“সত্য কখনও মুখোশ পরে না,কিন্তু মানুষ করে।”
📌 ডিসক্লেইমার: এই বিশ্লেষণে ব্যবহৃত কবিতাংশ শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে রচিত। কোনো ব্যক্তি বা ঘটনার সাথে মিল থাকলে তা কাকতালীয়।কপিরাইট আইন অনুযায়ী এই কন্টেন্টের কোনো অংশ অনুমতি ছাড়া ব্যবহার নিষিদ্ধ।
অনুপ্রেরণার কবিতা
বিরহের কবিতা – একাকিত্বে ডুবে থাকা ভালোবাসার আর্তি

“চলে গেলে, তবুও থেকো”
তামান্না রহমান
তুমি চলে গেলে, ভেঙে দিলে সব,
অন্তরের ঘরে আজ শুধু নিঃশব্দ ধ্বনি।
একটি একটি করে স্মৃতির পাতা উল্টাই,
প্রতিটি পৃষ্ঠায়—তুমি, আর আমি।
তোমার চোখে একদিন ছিল স্বপ্ন,
আজ সেই চোখ অন্য কারো দিকে।
আমার হৃদয় পড়ে থাকে মৃদু বাতাসে,
যেখানে তুমি ফিরে আসো না আর।
চিঠির বাক্সে পড়ে আছে ভালোবাসা,
তুমি ছিঁড়ে ফেললেও শব্দগুলো রয়।
ভালোবাসা কি এতটাই নড়বড়ে ছিলো,
যে একটা আঘাতে সব ফুরিয়ে গেল?
চাঁদ আজও জ্বলছে আকাশে—
তবে সে আলো আর উষ্ণ নয়।
তোমার অনুপস্থিতি এক শূন্যতা,
যেখানে কেবল আমার অন্তর কাঁদে।
ভালোবাসি কখনো বলবো না আর,
কারণ ভালোবাসা কাঁদতে শেখায়।
তবুও, কোথাও যেন অপেক্ষা করি,
তুমি ফিরবে বলে—তোমার প্রতিক্ষায়।
বিরহের কবিতা: প্রেম হারানোর পরও ভালোবাসা থাকে বেঁচে
মূলভাব (Summary)
এই বিরহের কবিতা এক একাকিত্বের চিত্র। প্রিয়জনের অনুপস্থিতিতে হৃদয়ের ভেতরে বেজে ওঠা নিঃশব্দ সুর।
চিঠির বাক্সে পড়ে থাকা ভালোবাসা, চাঁদের শীতল আলো, আর প্রতীক্ষার যন্ত্রণায় ডুবে থাকা ভালোবাসার প্রতিটি স্তর এখানে প্রকাশ পেয়েছে।
এটা কেবল একটি কবিতা নয়—এটা এক আত্মার আর্ত
ভালোবাসা যেমন মিলনের আনন্দ, তেমনি বিরহের যন্ত্রনাও এক গভীর অনুভব।কারো চলে যাওয়া, স্মৃতির পাতায় রেখে যায় অবিনশ্বর ছাপ।
এই কবিতাটি এমনই এক হৃদয়স্পর্শী গল্প বলেছে—যেখানে প্রিয়জন চলে গেছে, কিন্তু তার ছায়া রয়ে গেছে অন্তরের প্রতিটি কোণে।
তুমি চলে গেলে, আর আমি রইলাম নিঃশব্দ অভিমানে
কবিতার শুরুতেই অনুভব করি এক প্রচণ্ড শূন্যতা। “তুমি চলে গেলে, ভেঙে দিলে সব”—এই পংক্তিতে লুকিয়ে আছে ভাঙনের ভয়াবহতা।
একজন প্রিয়জনের চলে যাওয়া শুধু শরীরী অনুপস্থিতি নয়, তা আত্মার রক্তক্ষরণ। সেই নিঃশব্দ ঘরে প্রতিটি দেয়াল যেন ফিরে ফিরে বলে—তুমি ছিলে।
স্মৃতির পাতায় তুমি এখনো আছো
“একটি একটি করে স্মৃতির পাতা ওল্টাই, প্রতিটি পৃষ্ঠায়—তুমি, আর আমি”—এই লাইন দুটো স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, ভালোবাসা হারালেও তার স্মৃতি কখনো হারায় না।
প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কিছু অনুভব, কিছু না বলা কথা। কবিতাটি সেই অনুভবগুলোকে রঙহীন করে তোলে না, বরং জীবন্ত করে তোলে প্রতিটি স্মৃতিকে।
ভালোবাসা কি সত্যিই এত ঠুনকো?
চিঠির বাক্সে পড়ে থাকা ভালোবাসা যেন অমর। যদিও প্রিয়জন ছিঁড়ে ফেলেছে সেই চিঠি, কিন্তু শব্দগুলো থেকে যায় হৃদয়ে।
কবি প্রশ্ন রাখেন—”ভালোবাসা কি এতটাই ঠুনকো ছিলো, যে একটা দিনেই সব ফুরায়?”
এই প্রশ্নটিই আসলে বিরহের কবিতার মূল ব্যথা—যেখানে প্রিয়জন ভুলে গেলেও ভালোবাসার মানুষটি ভুলতে পারে না।
চাঁদ আলো দেয়, কিন্তু সে আলো আর উষ্ণ নয়
“চাঁদ আজও জ্বলছে আকাশে—তবে সে আলো আর উষ্ণ নয়”—এই চিত্রকল্পে কবি দেখিয়েছেন, পৃথিবী যেমন আগের মতই চলে, তবে যার হৃদয়ে ভালোবাসা ভাঙে, তার কাছে পৃথিবীর সবকিছুই বদলে যায়।
চাঁদের আলো আর প্রেমিকের হৃদয় গরম করে না, কারণ প্রিয়জন এখন অন্য কারো দিকে তাকায়।
একতরফা প্রতীক্ষা আর ভালোবাসা
“ভালোবাসি বলেও বলবো না আর”—এখানে আত্মসম্মান এবং নিঃশব্দ প্রতিবাদ একসাথে মিশে আছে।
ভালোবাসা কাউকে কাঁদাতে শেখালে, সে ভালোবাসা আর বলা চলে না।
তবুও, কবি বলেন—”কোথাও যেন অপেক্ষা করি”—এ এক নিঃশব্দ আশা। হয়তো প্রিয়জন কোনো একদিন ফিরে আসবে—একটি ছোট্ট ভুলে।
উপসংহার
বিরহের কবিতা শুধু কিছু শব্দ নয়, এটি এক নীরব যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি। ভালোবাসা যেমন হৃদয়কে আলোয় ভরিয়ে তোলে, তেমনি তার বিচ্ছেদ হৃদয়ের গভীরে আঁচড় কাটে।
এই কবিতায় সেই নিঃসঙ্গতা, সেই কষ্টের চিত্র ধরা পড়েছে—যেখানে কেউ আর ফিরে আসে না, কিন্তু ভালোবাসা থেকে যায় চিরকাল।
আমরা যারা ভালোবেসেছি, তারাই জানি বিরহ কতটা গভীর হতে পারে। এই কবিতা যেন তাদেরই কণ্ঠস্বর, যারা আজও স্মৃতির পাতায় একজনকে খুঁজে ফেরে।
তাই এ কবিতা শুধু পড়ার জন্য নয়, অনুভবের জন্য।
আপনার যদি এমন কোনো হৃদয়ভাঙা স্মৃতি থাকে, তবে এই কবিতা হয়তো আপনারই জীবনের প্রতিচ্ছবি।
ভালোবাসা থাকুক সুন্দরভাবে, আর বিরহ হোক কবিতার ভাষায় অমর।
অনুপ্রেরণার কবিতা
“তবু আমি একা – নিঃসঙ্গ হৃদয়ের নীরব আর্তনাদ”

” তবুও একা”
মিজানুর রহমান
সবাই আছে চারিপাশে তবু আমি একা,
কেটে গেল অপেক্ষার প্রহর পেলাম না কারো দেখা।
ভেবেছিলাম আজ আসিবে কেহ দরজায় দিবে নাড়া,
দরজার পানে কান পেতে থাকি পাইনি কারো সাড়া।
আশার ঘোরে দিন কেটে গেল আসলো না তো কেউ,
নিমন্ত্রণের চিঠি দিয়ে ডাকলো না তো কেউ।
কোন পথে যে চলবো আমি সকল পথ ই বাঁকা,
পাইনা খুঁজে পথের দিশা তাই তো আমি একা।
তবুও একা – একাকীত্বের কবিতা
ভূমিকা: একাকীত্ব এক অদৃশ্য যন্ত্রণা
জীবনের প্রতিটি বাঁকে আমরা নানা রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই।
কখনও ভালোবাসা পাই, আবার কখনও সেই ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়। ঠিক তখনই শুরু হয় একাকীত্বের যাত্রা।
“সবাই আছে চারিপাশে তবু আমি একা”—এই একটি বাক্যেই যেন ধরা পড়ে অগণিত মানুষের জীবনের অস্পষ্ট এক সুর, যা হৃদয়ের গভীরে দীর্ঘশ্বাস হয়ে জমে থাকে।
এই লেখায় আমরা বিশ্লেষণ করবো এমন এক কবিতা যা আমাদের চিরচেনা একাকীত্বের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।
সেইসাথে আমরা জানবো কেন এই একাকীত্বের কবিতা পাঠকের মনে এতটা সাড়া জাগায়।
মূলভাব: নিঃসঙ্গতার কাব্যিক ছায়া
এই কবিতাটি নিছক শব্দের ছন্দ নয়; এটি একাকীত্বের অশ্রুজল। প্রতিটি চরণ যেন মানুষের অন্তর্দহনের এক একটি পর্দা খুলে দেয়।
কবি বুঝিয়ে দিয়েছেন—ভিড়ের মাঝেও একজন মানুষ কতটা নিঃসঙ্গ হতে পারে।
বন্ধুরা থাকে, আত্মীয়েরা পাশে থাকেন, তবুও হৃদয়ের ফাঁকা জায়গাটা কেউ ভরাতে পারে না। এই অনুভবই কবিতার মূল স্পন্দন।
কবিতায় “দরজায় দিবে নাড়া”—এই লাইনটি বোঝায় কারো আসার অপেক্ষা। কিন্তু বাস্তবে কেউ আসে না।
এটি শুধু কবির একার নয়, অসংখ্য পাঠকের জীবনের বাস্তবতা।
অনেকেই এমন অপেক্ষা করেন, যা কখনও পূর্ণ হয় না। কবি সেই অস্ফুট প্রতীক্ষার চিত্র এক সহজ অথচ হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
একাকীত্বের কবিতা কেন পাঠকের হৃদয় ছোঁয়
১. ব্যক্তিগত সংযোগ সৃষ্টি করে:
যারা একাকীত্বে ভোগেন, তারা এই ধরণের কবিতায় নিজেদের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পান। ফলে মানসিক প্রশান্তি ও সাহচর্যের অনুভব জন্ম নেয়।
২. চিরন্তন মানবিক অনুভূতি:
একাকীত্ব মানুষের জন্মগত আবেগের অংশ।
প্রেমহীনতা, বঞ্চনা বা সমাজের অবহেলায় এই অনুভব আরও গভীর হয়।
৩. কবিতার ভাষার সারল্য:
এই কবিতার সৌন্দর্য এর সরলতায়। কোনো জটিল শব্দ নেই, তবুও হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
একাকীত্ব থেকে মুক্তির উপায়
এই ধরণের একাকীত্বের কবিতা পাঠের মাধ্যমে অনেকে মানসিক প্রশান্তি পান।
কারণ কবিতা যেন একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু, যার কাছে আপনি নিজের কষ্ট উজাড় করে দিতে পারেন।
তবে বাস্তবে, এই নিঃসঙ্গতা কাটাতে দরকার—
- আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার
- সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ
- নতুন বন্ধু তৈরি
- পরিবার বা প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো
কবিতা হতে পারে সেই প্রেরণার উৎস, যা আপনাকে আবার হাসতে শেখায়, ভাবতে শেখায়—জীবন থেমে যায় না, কেউ না কেউ আপনার অপেক্ষায় আছেন।
উপসংহার: শব্দের গভীরে একা মানুষের আর্তনাদ
“তবুও একা” কেবল একটি কবিতা নয়—এটি একটি জীবনদর্শন, একটি অন্তর্জগতের প্রতিচ্ছবি।
যারা একাকীত্বে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি এক উষ্ণ আলিঙ্গনের মতো।
কবিতা আমাদের শেখায়—যদিও আমরা একা অনুভব করি, আসলে আমরা একা নই।
কেউ না কেউ, কোথাও না কোথাও, ঠিক এই অনুভবটাই বয়ে বেড়াচ্ছেন।
এই ধরণের একাকীত্বের কবিতা আমাদের শেখায়, নিঃসঙ্গতার মধ্যেও সৃষ্টি সম্ভব, ভালোবাসা সম্ভব।
আর এই শব্দই হয়ে উঠতে পারে আপনার পরবর্তী অনুপ্রেরণা।
অনুপ্রেরণার কবিতা
“নারীর আত্মপরিচয়: রূপের ছাঁচ নয়, আত্মার শক্তিই নারীর আসল পরিচয়”

পুরুষের দৃষ্টিতে নারী
তামান্না রহমান
হ্যাঁ, আমি নারী।
তোমার নিখুঁত চোখে হয়তো অসম্পূর্ণ,
কারণ আমার গাল দাগহীন নয়,
গায়ে নেই দুধে-আলতা মাধুর্য।
আমার চুল কোমর ছোঁয় না,
চোখে নেই হরিণী টান—
তবু এ চোখে জমে আছে শত শতাব্দীর জীবনের জলছবি।
তুমি চেয়েছিলে শিক্ষার আভায় দীপ্তময় এক নারী,
নম্রতা, ভদ্রতা আর কোমলতার প্রতিমূর্তি।
আমি তা-ও নই, আমি সংযমের ছায়া নই,
আমি উত্তরের আগুন।
আমার কণ্ঠে জন্ম নেয় প্রতিবাদ,
ভদ্রতার মুখোশে ঢাকা আবেগের অভিনয় নয়।
তোমার চোখে আমি কলঙ্কিনী—
কারণ আমার শরীরে দাগ আছে,
মেদের আস্তরণে লুকিয়ে আছে অভিজ্ঞতার আলপনা।
তুমি বোঝো না,
এই দাগ—নতুন প্রাণ জন্মদানের চিহ্ন,
এই মেদ—অসীম সহ্যশক্তির ফল।
আমি তোমার কাঙ্ক্ষিত সৌন্দর্যের প্রতিমা নই,
আমি শরীর না, আত্মার আর্তি।
রূপকথার রাজকন্যা নই—
আমি রক্তমাংসের বাস্তবতা।
তুমি যাকে এড়িয়ে যাও,
সে-ই তোমার ঘর গড়ে তোলে,
তোমার ক্লান্ত দুপুরে জলের মতো শান্তি আনে।
আর তুমি শুধু খুঁজে ফিরো এক অলীক প্রতিমা—
যা কখনও বাস্তব হয় না,
শুধু থাকে কল্পনার খাঁচায় বন্দী।
নারীর আত্মপরিচয়: সমাজের চোখে নয়, নিজের মানদণ্ডে
নারীর সৌন্দর্য কি কেবল বাইরের রূপে মাপা যায়?
এই প্রশ্নটাই যেন ছুঁয়ে যায় কবিতাটির প্রতিটি চরণে।
একজন নারী তার নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন সমাজের প্রতিষ্ঠিত সৌন্দর্যের ধারণার বিপরীতে।
তাঁর গাল দাগহীন নয়, চুল কোমর ছোঁয় না, চোখে নেই হরিণী টান।
কিন্তু এই চাহনিতে লুকিয়ে আছে শত জীবনের গল্প, অভিজ্ঞতার জলছবি।
তিনি সেই নারী, যিনি বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতিমা নন, বরং আত্মার গভীরতা নিয়ে বেঁচে থাকা এক সাহসী মানুষ।
সমাজের চোখে নারী কি কেবল নম্রতার প্রতিচ্ছবি?
সমাজ চায় এক শিক্ষিত, নম্র, ভদ্র ও কোমল নারী। কিন্তু এই কবিতার নারী বলেন, তিনি সংযমের ছায়া নন, তিনি উত্তরের আগুন।
তাঁর কণ্ঠে আছে প্রতিবাদের শক্তি, আছে আবেগের সাহসী প্রকাশ। তিনি ভদ্রতার মুখোশে ঢাকা আবেগ নন—তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতায় গড়া জীবন্ত আত্মা।
শরীরের দাগ নয়, এই তো জীবনধারণের গর্ব
এই কবিতায় নারীর শরীরের দাগ আর মেদকে দেখানো হয়েছে গর্বের প্রতীক হিসেবে।
সমাজ যেখানে এগুলোকে কলঙ্ক ভাবে, সেখানে কবিতার নারী জানিয়ে দেন—এই দাগ এক নতুন প্রাণের জন্মদানের স্মৃতি।
এই মেদ অসীম সহ্যের প্রতীক।
এগুলো লুকানোর কিছু নয়, বরং এগুলোই নারীর আসল পরিচয়ের অংশ।
নারী রূপকথা নয়, বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি
নারী কেবল রূপকথার রাজকন্যা নয়, বরং রক্তমাংসের এক জীবন্ত সত্তা।
তিনি কল্পনার খাঁচায় বন্দী কোনো নিখুঁত প্রতিমা নন।
সমাজ যাকে এড়িয়ে চলে, সেই নারীই ঘর গড়ে তোলে, ক্লান্ত দুপুরে শান্তির জলের মতো পাশে থাকে।
অথচ পুরুষ খুঁজে ফেরে এক অলীক সৌন্দর্য, যা বাস্তবে কখনও পাওয়া যায় না।
নারীর আত্মপরিচয়: নিজের চোখে নিজের গুরুত্ব
এই কবিতা নারীর আত্মপরিচয়ের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। সমাজ যেভাবে নারীকে দেখতে চায়, তার বাইরে গিয়ে নারী নিজেকে নিজের চোখে মূল্যায়ন করেন।
তিনি নিজেই তাঁর পরিচয়ের নির্মাতা।
সৌন্দর্য, ভদ্রতা কিংবা রূপের মাপকাঠি দিয়ে নয়, বরং আত্মার শক্তি, অভিজ্ঞতা ও প্রতিবাদী মন দিয়ে তিনি নিজের পরিচয় খুঁজে নেন।
-
কবিতার রাজ্য2 months ago
সময় বড্ড দামী- দেওয়া মানেই কি ভালোবাসার গুরুত্ব?
-
কবিতার রাজ্য2 months ago
“অবিচ্ছিন্ন ভালোবাসা: সম্পর্কের এক অনন্য দার্শনিকতা”
-
সৃজনশীলতা2 months ago
নিখোঁজ ভালোবাসা – একাকিত্বের আধুনিক অভিধান
-
রোমান্টিক সাহিত্য2 months ago
“রাগ ও ভালোবাসার দ্বন্দ্ব: একটি আত্মনিবেদিত প্রেমের পদ্য”
-
অনুপ্রেরণার কবিতা2 months ago
একদিন এসো সময় করে – প্রেমের অপেক্ষার কবিতা
-
সৃজনশীলতা2 months ago
হৃদয়স্পর্শী বাংলা কবিতা | স্মৃতির অনামিকা ধরে এক প্রেমযাত্রা
-
অনুপ্রেরণার কবিতা2 months ago
ভালোবাসার চোখে কবিতার জন্ম হয় | প্রেম চির স্বগীয় সুখ
-
সৃজনশীলতা2 months ago
ভালোবাসার বিনিময়ে হৃদয় | একটুকরো অকৃত্রিম ভালোবাসার সন্ধানে