পিতা-মাতার স্নেহ
বাবার ভালোবাসা কখনোই ভাষায় ব্যক্ত হয় না

বাবার ভালোবাসা
তামান্না রহমান
বাবার ভালোবাসা—
চোখে নয়,
বুঝতে হয় নীরবতায়।
তাঁর কথার মাঝে থাকে না আহ্লাদ,
তবু প্রতিটি বাক্যে থাকে
একটি অসীম দায়িত্বের স্পর্শ।
বাবার ভালোবাসা—
রোদে ছাতা না ধরার গল্প,
তবু নিজে ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা।
বটবৃক্ষের মতো জীবনের সব ঝড়-ঝাপটায়,
তিনি আগলে রাখেন পরম মায়ায়।
তাঁর ভালোবাসা থাকে
সকালবেলার শব্দহীন চায়ের-কাপে,
থাকে রাতভর জাগা ঘুমহীন প্রহরে।
আমি যতই বড় হই,
তিনি ততই নিঃশব্দ হন—
শুধু রেখে যান
ভালোবাসার এক অদৃশ্য দেয়াল।
কবিতা মূলভাব:
উচ্চারিত নয়, অনুভবযোগ্য
বাবার ভালোবাসা কখনোই ভাষায় ব্যক্ত হয় না।
তাঁর ভালোবাসা থাকে প্রতিটি দায়িত্বে, প্রতিটি নিরব আহ্বানে।
যখন তিনি ক্লান্ত শরীর নিয়ে অফিস ফেরেন,
যখন মুখে কিছু না বলে টিফিন বক্স গুছিয়ে দেন—
সেই সব মুহূর্তই আসলে ভালোবাসার ভাষা।
বাবা মানেই বটবৃক্ষ যার ছায়া’য় সন্তান’রা আশ্রয় নেয়,বিপদে মাথা গুঁজে আর বাবা নামক ব্যক্তি তার সমস্ত ডালপালা দিয়ে সন্তানকে বিপদমুক্ত করে,আমৃত্যু আগলে রাখে।শীতল ছায়া দিয়ে এবং পরম ভালোবাসা,স্নেহ দিয়ে বাবা নামক ব্যক্তি ঝড়ঝাপটা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন।
এক নিঃশব্দ স্নেহের গল্প
এই কবিতাটির কেন্দ্রবিন্দু হলো “বাবার ভালোবাসা”—যা চিরকালই ছিল অন্তর্মুখী, নিরব এবং দায়িত্বনিষ্ঠ।
একজন বাবা সন্তানকে ভালোবাসেন অনুশাসনের ছায়ায়,
স্নেহের অভিব্যক্তি তাঁর চোখে থাকে না, থাকে কঠোরতার মুখোশে।
তবে সেই মুখোশের আড়ালেই থাকে এক গভীর, অবর্ণনীয় ভালোবাসা।
তিনি হয়তো বলেন না “ভালোবাসি”,
তবু সন্তানের জন্য রাত জাগেন, পথ হাঁটেন, প্রতিকূলতায় লড়েন।
এই কবিতায় সেই “নীরব ছায়া”র গল্পই বলা হয়েছে—
যেখানে বাবা আছেন, সবসময় আছেন,
তাঁর অস্তিত্বের মাধ্যমে, না বলার ভাষার মধ্যেই।
এটি এক প্রকার মনস্তাত্ত্বিক ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি,
যেখানে বাবা হয়ে ওঠেন সন্তানের জন্য পাহাড়,
যিনি সব ঝড় নিজের বুকে নেয়,
কিন্তু সন্তানকে ছায়া দিয়ে আগলে রাখেন।
এই কবিতার প্রতিটি চরণ পাঠকের মনে করিয়ে দেয়—
আমরা অনেক সময় মায়ের আবেগ অনুভব করি প্রকাশে,
কিন্তু এই ভালোবাসা অনুভব করতে হয় অভিজ্ঞতায়, উপলব্ধিতে।
তাঁর প্রতিটি ত্যাগই ছিল নিঃশব্দ,
তবু সেই নিঃশব্দতা ছিল শব্দের চেয়েও শক্তিশালী।
উপসংহার: বাবার ভালোবাসা – চিরন্তন এক ছায়া
একজন পিতার ভালোবাসা হয়তো চোখে পড়ে না,
কিন্তু তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি চিন্তা,
সন্তানের জন্যই হয়।
এই কবিতাটি সেই অদৃশ্য ভালোবাসার প্রতীক—
যা মন ছুঁয়ে যায়, চোখ ভিজিয়ে দেয়,
আর হৃদয়ে গেঁথে থাকে বহুদিন।
নব যুগের কাব্য
পিতা-মাতার স্নেহ
বাবার আদর – সন্তানের জীবনে এক আকাশছোঁয়া আশ্রয়

বাবার আদর
মিজানুর রহমান
বাবার আদর মেঘের ছায়া,
মাথার উপর স্নেহের মায়া।
কঠিন হাতে নরম স্পর্শ,
জীবনপথে আলোর হর্ষ।
সকালে তার কোমল ডাক,
জ্যোৎস্না রাতে গল্পে ভরা থাক।
চোখে স্বপ্ন, মুখে হাসি,
বাবার আদর অমলিন বাতাসী।
কখনো ধমক, কখনো ভালোবাসা,
পথের কাঁটায় রাখে আগল পাশা।
বাবার কাঁধে বিশ্ব জয়,
তার আদরে হৃদয় মোহনময়।
বাবা, তুমি জীবনের ধ্রুবতারা,
তোমার আদর আমার পথের সারা।
চিরকাল থাকুক এই স্নেহের বন্ধন,
বাবার আদরে পূর্ণ হোক সন্তানের জীবন।
বাবার আদর:বাবার ভালোবাসা নীরব ভাষা
প্রতিটি সন্তানের জীবনে মা যেমন অনিবার্য, বাবা তেমনই ছায়াস্বরূপ। তবে বাবার ভালোবাসা অনেক সময় দৃশ্যমান নয়, কারণ তা লুকিয়ে থাকে নিরবে দায়িত্ব পালনে, কঠোরতায়, আর নির্ভরতার মাঝখানে।
বাবার আদর এক অলিখিত আশ্বাস, যা সন্তানের জীবনের প্রতিটি ধাপে সাহস জোগায়।
কবিতায় প্রকাশ পায় বাবার স্নেহ
“বাবার আদর মেঘের ছায়া”—এই একটি লাইনেই কবি তুলে ধরেছেন পিতার ভালোবাসার গভীরতা। মাথার ওপর মেঘ যেমন ছায়া দেয়, ঠিক তেমনই বাবা সন্তানের মাথার ওপর ছায়ার মতো সুরক্ষা দিয়ে যান।
কখনো হাতে কঠোর শাসন, আবার কখনো চোখে কোমলতা—এই দুইয়ের মিলনেই গড়ে ওঠে আদর্শ পিতৃত্ব।
প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যেসে বাবার উপস্থিতি
প্রতিদিন সকালে তার কোমল ডাক, রাতে গল্প শোনানোর আবেগ—সবকিছুতেই ফুটে ওঠে তার ভালোবাসার ছাপ।
কখনো তিনি বলেন না ভালোবাসি, কিন্তু তার প্রতিটি কাজে ছড়িয়ে থাকে অকৃত্রিম স্নেহ। এসব ছোট ছোট মুহূর্তই এক শিশুর মনে গেঁথে যায় চিরজীবনের জন্য।
ভালোবাসা আর ধমকের মধ্যেও লুকানো থাকে আদর
শুধু আদরই নয়, কখনো কখনো বাবার ধমকও সন্তানের কল্যাণেই হয়। কঠিন কথার পেছনেও থাকে গভীর মমতা।
একজন পিতা কখনো সন্তানকে কষ্ট দিতে চান না, বরং তাকে জীবনযুদ্ধে জয়ী করে তুলতে চান।
এই দৃঢ়তা আর দিকনির্দেশনাই ভবিষ্যতে শিশুকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে।
বাবার কাঁধে বিশ্ব জয়ের সাহস
একজন সন্তান যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন তার জন্য বাবার কাঁধই হয় সবচেয়ে বড় অবলম্বন।
বাবা মানুষটি বাহিরে শক্ত থাকলেও ভিতরে শিশুসুলভ।বাবা চান না তার সন্তান পৃথিবীতে কষ্ট করে বাঁচুক।
তাই তিনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানের জন্য দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করে সন্তানের মুখে হাসি ফুটান।
পিতা নিজের সব কষ্ট ভুলে সন্তানকে এগিয়ে দিতে চান। তার উৎসাহ, পরামর্শ, এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সন্তানের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে।
ধ্রুবতারার মতো পথপ্রদর্শক
জীবনের পথে চলতে গিয়ে অনেক বাঁক আসে, অনেক অন্ধকার নামতে চায়। তখন বাবার বলা কিছু শব্দ, কিছু স্মৃতি, কিংবা তার শেখানো মূল্যবোধ পথ দেখায়।
বাবা সব সময় সন্তানকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।
একজন বাবার কখনো খারাপ হয় নাহ,মানুষ হিসাবে অনেক মানুষ খারাপ আছে কিন্তু একটা খারাপ বাবা পৃথিবীতে নেই।
বাবা মানেই ছোট আঙুল ধরে হাঁটতে শিখানো,বাবা মানেই নিজে অশিক্ষিত হলেও সন্তানকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করা।
তিনি হয়ে ওঠেন এক ধ্রুবতারা, যিনি পথ হারালে দিক নির্দেশ করেন আলো দিয়ে।
চিরস্থায়ী বন্ধন, যা কালের অতীত হয় না
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো সন্তান বড় হয়ে যায়, দূরে চলে যায়। কিন্তু বাবার ভালোবাসা কখনো পুরনো হয় না।
এটি একটি এমন বন্ধন, যা কোনো বয়স, সময় বা দূরত্বে থেমে থাকে না। হৃদয়ের গভীরে প্রতিটি সন্তানের জন্য এই স্নেহ চিরস্থায়ী।
মূলভাব:
বাবার আদর হলো সন্তানের জীবনে এক অনির্বচনীয় আশ্রয়, যার কোনো বিকল্প নেই। তার নীরব উপস্থিতি, নির্ভরতা, আর কঠিন ভালোবাসা একজন মানুষকে গড়ে তোলে ভিতর থেকে।
এই কবিতাটি সেই চিরন্তন সম্পর্ককে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় প্রকাশ করে, যা পিতৃত্বের এক অনন্য নিদর্শন।
পিতা-মাতার স্নেহ
মায়ের ভালোবাসা-বোঝা যায় দূরে গেলে

মায়ের কোল
মিজানুর রহমান
মায়ের কোলে ছিলাম আমি আঠারো বছর ধরে,
অসংখ্য বার হেঁটেছি আমি বাবার হাতটি ধরে,
তবুও যেন বুঝিনি তখন কাছে থাকার মর্ম,
দূরে থেকে বুঝেছি এখন ভালোবাসার ধর্ম!!
ক্ষনিকের আড়ল করে দিয়েছে যে বিদায়,
চোখের জল আড়াল করে পথে পানে চায়।
আমার মার যে বন্ধী জীবন কাটায় একলা ঘরে,
একটু সময় হয় না কারো সবাই থাকে দূরে।
আসি যখন তাদের কাছে খনিক দেখার ছলে,
মনটা তখন হালকা করে কতো কথা বলে,
তবুও যেন হয়না বলা তাদের কথার শেষ,
তাদের কথা শুধালে বলে এই তো আছি বেশ।।
আমায় এবার ফিরতে হবে নাই যে কোনো উপায়,
মন যে তাদের মানে না হায় দিতে আমায় বিদায়!
বিদায় বেলায় নিশ্চুপে বয় চোখের কোনে জল,
দুঃখ গুলো লুকিয়ে করে ভালো থাকার ছল;
তাদের মনের কষ্ট দেখে অশ্রু আসে চোখের কোনে,
শান্তির পরশ লাগে যখন জড়িয়ে থাকি বুকের পানে।
কেঁদোনা গো মাগো তুমি বলি কানের কাছে,
তুমি ছাড়া বল মাগো কে বা আমার আছে!
একলা যদি লাগে তোমার পরান আকুল হলে,
আসবো ফিরে মাগো আমি আবার তোমার কোলে!!
মূলভাব: মায়ের ভালোবাসা ও দূরত্বের বেদনা
মানুষের জীবনে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হলো মায়ের কোল। কবিতায় কবি তুলে ধরেছেন সেই শৈশবের দিনগুলো, যেখানে তিনি মায়ের কোলে ছিলেন দীর্ঘ আঠারো বছর।
বাবার হাত ধরে হাঁটার স্মৃতিও ছিল প্রতিদিনকার জীবনের অংশ। কিন্তু তখন তিনি বোঝেননি সেই নিকট সম্পর্কের আসল মূল্য।
সময়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, আর সেই দূরত্বেই তিনি বুঝেছেন ভালোবাসার প্রকৃত মানে।
ভালোবাসা বোঝা যায় দূরে গেলে
যখন কাছের মানুষ দূরে থাকে, তখন তাদের গুরুত্ব অনেক বেশি করে অনুভব করা যায়।
কবিতায় কবি জানাচ্ছেন, মায়ের নিঃসঙ্গ জীবন, একা ঘরে কাটানো সময়, আর সন্তানদের ব্যস্ত জীবনের মাঝে অবহেলিত হয়ে পড়া – সবই এক গভীর বাস্তবতা।
সবাই দূরে থাকে, কারো সময় হয় না মায়ের জন্য।
সাময়িক সাক্ষাতে জমে থাকে অশেষ কথা
কবি যখন মায়ের কাছে যান, তখন খনিকের দেখা হলেও মন হালকা হয়ে আসে।
মনের ভিতর জমে থাকা অনেক কথা বলা হয়। কিন্তু মায়ের মুখে থাকে একটাই কথা – “এই তো আছি বেশ”।
সেটাই বোঝায় তাঁর অন্তর্দহন লুকিয়ে রাখার কৌশল।
বিদায়ের সময়ের বেদনা
বিদায় নিতে গেলে চোখের কোনে জমে ওঠে জল।
মা কিছু বলেন না, কিন্তু চোখে থাকে না বলা দুঃখ।
ভালো থাকার অভিনয় করলেও মনের গভীরে থাকে অশেষ যন্ত্রণা। এই ভালোবাসা আর যন্ত্রণার মিশ্র অনুভূতিই কবিতার মর্মস্পর্শী দিক।
মায়ের ভালোবাসা
পৃথিবীতে প্রতিটি সন্তানের জন্য মায়ের ভালো স্নেহ হল জীবনের সবচেয়ে দামী জিনিস।যার মা নেই সে কোন দিন মায়ের ভালোবাসা উপলব্দি করতে পারে নাহ।মায়ের শরীর মিষ্টি ঘ্রাণ দামী পারফিউমকেও হার মানাবে।
মাকে ভালোবাসা জানানোই শান্তি
কবি মা’কে জড়িয়ে ধরলে শান্তির অনুভূতি পান। বলছেন, “কেঁদো না মাগো,” কারণ মা ছাড়া আর কেউ নেই।
কবি প্রতিশ্রুতি দেন, একা লাগলে তিনি ফিরে আসবেন মায়ের কোলেই। এই কথাগুলো সন্তান ও মায়ের সম্পর্কের গভীরতার প্রতিচ্ছবি।
পিতা-মাতার স্নেহ
“মাতৃত্বের বেদনা: অদৃশ্য সন্তানের জন্য এক মায়ের হৃদয়বিদারক যাত্রা”

মাতৃত্বের স্বপ্ন
আন্না রহমান
(মাতৃত্বের বেদনা)
শিশির ভেজা সকালের আলো,
অশ্রুসিক্ত চোখ খুঁজে ফেরে পালক।
কোল ভরা শান্তির আহ্বান,
স্বপ্ন বুনে হৃদয়ের মালক।
চোখ মেলে চায় আকাশ পানে,
গর্ভের শুন্যতা বয়ে চলে।
নিঃশব্দে হাসে, নিঃশব্দে কাঁদে,
ভেতরে অগ্নি জ্বলে অবিরত।
কানে কাছে কেউ ফিসফিসায়,
“সময় আসবে, ধৈর্য ধরো।”
কিন্তু সময় তো নদীর স্রোত,
নবজাতকের ঘ্রাণে হৃদয় কাঁদে চুপিসারে।
ভাঙা আয়নার টুকরোয় খোঁজে,
একটি মুখ, নিজের মতো।
একটি হাত, ছোট্ট আঙুল,
যা একদিন ধরবে তার কাঁধ।
কোল ফাঁকা, হৃদয় ভরা,
আকুলতা তাকে ঘিরে রাখে।
শব্দ বলে না, চোখ বয় ঢেউ,
অশ্রু ঝরে নীরবে।
রান্নাঘরে খালি থালা পড়ে,
খেলনার দোকানে দাঁড়িয়ে থাকে।
ছোট্ট জামায় হাত রাখে চুপে,
ভেতরে ব্যথা, বাইরে হাসে।
দোষ কার? নিয়তি নাকি তার?
কেউ জানে না প্রশ্নের উত্তর।
তবুও ভালোবাসে আপন মনে বাড়ে,
অদেখা সন্তানকে ঘিরে।
একদিন হয়তো মা হবে সে,
না হলেও কি ভালোবাসা কমে?
মাতৃত্ব মানে শুধু গর্ভধারণ নয়,
ভালোবাসা হৃদয়ের অতল গহনে।
“শিশির ভেজা সকালের আলো”: মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা ও হৃদয়ের গহন যন্ত্রণা
ভূমিকা: অদৃশ্য সন্তানের জন্য মায়ের হাহাকার
“শিশির ভেজা সকালের আলো,অশ্রুসিক্ত চোখ খুঁজে ফেরে পালক”—এই কবিতার প্রথম চরণে ধরা পড়ে এক নিঃসঙ্গ মায়ের অন্তর্গত আকুলতা।এই কবিতাটি কেবল মাতৃত্বের অপূর্ণ ইচ্ছাকে নয়,বরং আমাদের সমাজের সেই সকল নারীদের কণ্ঠস্বর যারা গর্ভধারণ করতে ব্যর্থ কিন্তু মাতৃসত্ত্বা নিয়ে বেঁচে আছেন।এটি এক অনবদ্য শিল্প-কর্ম,যেখানে অলিখিত যন্ত্রণা শব্দের আড়ালে নিজেকে প্রকাশ করে।
কবিতার গাঠনিক বিশ্লেষণ
১. স্তবকভিত্তিক মূলবক্তব্য
-প্রথম স্তবক:“শিশির ভেজা সকালের আলো…” → প্রকৃতির মাধ্যমে মাতৃহৃদয়ের খোঁজ।
– দ্বিতীয় স্তবক: “চোখ মেলে চায় আকাশ পানে…” → শূন্যতা ও প্রতীক্ষার যন্ত্রণা।
– তৃতীয় স্তবক:“কানে কাছে কেউ ফিসফিসায়…” → আশার ফাঁদে ধরা পরামর্শ।
– চতুর্থ স্তবক:“ভাঙা আয়নার টুকরোয় খোঁজে…” → আত্ম-অন্বেষণ ও সন্তান খোঁজার চেষ্টা।
-শেষ স্তবক:“একদিন হয়তো মা হবে সে…” → মাতৃত্বের সংজ্ঞাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
২. প্রতীক ও উপমার শক্তি
– “অশ্রুসিক্ত চোখ”: অপ্রাপ্তির বেদনা →আকাঙ্ক্ষার মর্মান্তিক হাহাকার।
– “গর্ভের শূন্যতা”: শারীরিক সীমাবদ্ধতা →দেহগত অপারগতার নিঃসঙ্গ স্বীকৃতি।
– “ভাঙা আয়না”: আত্মপরিচয়ের সংকট →নিজস্ব অস্তিত্ব ও পরিচয়ের দ্বিধাগ্রস্ত প্রতিবিম্ব।
– “খেলনার দোকানে দাঁড়িয়ে থাকে”: সমাজের চোখে অসম্পূর্ণতা →সমাজের দৃষ্টিতে অসম্পূর্ণ মাতৃত্বের মলিন প্রতিচ্ছায়া।
সামাজিক প্রাসঙ্গিকতা
১. বন্ধ্যাত্ব ও নারীর মানসিক যুদ্ধ
মাতৃত্বের বেদনা কবিতাটি সমাজের সেইসব নারীর নিরব আর্তনাদ রূপে উঠে এসেছে,যারা গর্ভধারণ করতে অক্ষম।অনেক সময় পরিবার ও সমাজ তাদের “অপূর্ণা”,”অসম্পূর্ণ সত্তা” কিংবা “প্রজনন-অক্ষমা’ হিসেবে দেখে,যা মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করে।
২. মাতৃত্বের বিকল্প সংজ্ঞা
“মাতৃত্ব মানে শুধু গর্ভধারণ নয়“—এই বাক্যটি এক গূঢ় প্রশ্ন তোলে:
– দত্তক নেওয়া → অনাত্মজ সন্তানকে বুকে তুলে নেওয়া,যেখানে ভালোবাসাই রক্তের সম্পর্কের অতিরিক্ত হয়ে ওঠে।
– সামাজিক মাতৃত্ব (Mentorship) → অভিভাবকতুল্য পথপ্রদর্শন,যেখানে মমতা ও দায়িত্ব এক মায়ের ছায়া বিস্তার করে।
– সৃষ্টিশীলতায় মাতৃসুলভ ভালোবাসা → চিন্তনের গর্ভে জন্ম নেওয়া সৃজনের প্রতি নিঃস্বার্থ অনুরাগ,যেখানে সৃষ্টি ও লালন-পালনের মধ্যেই ফুটে ওঠে এক অন্যরকম মাতৃত্ব।
৩. পুরুষের ভূমিকা ও সহমর্মিতা
প্রায়শই পুরুষ সঙ্গীর হৃদয়েও জন্মায় বিষণ্নতা ও নিঃশব্দ মানসিক চাপ,কিন্তু সমাজ শুধু নারীর দিকেই আঙুল তোলে।
এই কবিতাটি স্মরণ করিয়ে দেয়— কবিতাটি স্মরণ করিয়ে দেয়—
এটি কেবলমাত্র একজন নারীর নয়,বরং এক দম্পতির নীরব বেদনার সমবেত অধ্যায়।
এখানে দু’জনেরই বেদনা,প্রতীক্ষা ও সহযাত্রা মিলেমিশে গড়ে তোলে এক অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতার চিত্র।
সাহিত্যিক প্রেক্ষাপট
– জীবনানন্দ দাশের “আবার আসিব ফিরে”: হারানোর বেদনা ও ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা।
-শামসুর রাহমানের “বেদনার দান”: শূন্যতা ও অপূর্ণতার গভীরতা।
– কবি সুফিয়া কামালের “মাতৃত্ব”: নারীর অন্তর্নিহিত শক্তি।
সমাধানের পথ
১. মানসিক সুস্থতা বিষয়ে সচেতনতা
পরামর্শ গ্রহণ → বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক পরামর্শদাতা ও মনোবিশেষজ্ঞের সহায়তা গ্রহণ করুন,যারা মানসিক ভার লাঘবে ও আত্মবিশ্বাস পুনর্গঠনে সাহায্য-সহযোগীতা করতে পারেন।
সহযোগী মনের মেলবন্ধন → একই অভিজ্ঞতা-জর্জরিত নারীদের সাথে আন্তরিক সর্ম্পক গড়ে তুলুন,যাতে আবেগ ভাগাভাগির মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি অর্জন সম্ভব হয়।
২. বিকল্প পথের অনুসন্ধান
– দত্তক নেওয়া: অনাত্মজ সন্তানকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া।
– সারোগেসি (যদি সম্ভব হয়): পরায়ত্ত মাতৃত্বের মাধ্যমে নতুন প্রাণের আগমন।
-ফোস্টার প্যারেন্টিং : অস্থায়ী অভিভাবকত্বে স্নেহ-ভরণ।
৩. সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন
– সচেতনতা তৈরি: বন্ধ্যাত্ব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন।
– সহানুভূতি: পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
কবিতার পিছনের গল্প
এই মাতৃত্বের বেদনা কবিতার লেখক নিজেই একজন INFERTILITY WARRIOR,যিনি দীর্ঘদিন বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। তাঁর কথায়—
“মাতৃত্ব শুধু জৈবিক নয়,এটি হৃদয়ের গভীরে লালিত একটি অনুভূতি।”
পাঠকের জন্য প্রশ্ন
- ১.”এমন যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে আপনার পরিচিত কেউ কি যাচ্ছেন?তাঁকে কীভাবে সাহায্য করবেন?”
- ২.”মাতৃত্বের বিকল্প পথ নিয়ে আপনার মতামত কী?”
💬মতামত জানান:
- আপনি কি এমন অনুভূতি মধ্যে দিয়ে দিন পাড় করছেন,যে অনুভূতি কাউকে বলা যায় না দেখানো যায় না,কেবল অনুভব করা যায়।আপনার অনুভূতি আমাদের ফেসবুক পেজে “নব যুগের কাব্য’ শেয়ার করুন।
শেষ কথা: মাতৃত্বের প্রকৃত অর্থ
“একদিন হয়তো মা হবে সে,না হলেও কি ভালোবাসা কমে?”—এই কবিতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মাতৃত্ব শুধু শারীরিক নয়,এটি হৃদয়ের অমোঘ আকাঙ্ক্ষা।
“যে নারী অন্যের শিশুকে আদর করে, সে-ই প্রকৃত মা।”
📌 ডিসক্লেইমার:
এই কবিতা ও বিশ্লেষণ লেখকের কল্পনা ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সাহিত্যিক ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে রচিত। এটি কোনো চিকিৎসা পরামর্শ নয়। বন্ধ্যাত্ব বা মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সমস্যায় ভুগলে অনুগ্রহ করে একজন যোগ্য চিকিৎসক বা পরামর্শদাতার সহায়তা নিন। লেখায় ব্যবহৃত চরিত্র, নাম ও ঘটনা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, কারো সঙ্গে মিলে গেলে তা কাকতালীয়। এই লেখার কোনো অংশ অনুমতি ছাড়া কপি বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার কপিরাইট আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয়।
-
কবিতার রাজ্য2 months ago
সময় বড্ড দামী- দেওয়া মানেই কি ভালোবাসার গুরুত্ব?
-
কবিতার রাজ্য2 months ago
“অবিচ্ছিন্ন ভালোবাসা: সম্পর্কের এক অনন্য দার্শনিকতা”
-
সৃজনশীলতা2 months ago
নিখোঁজ ভালোবাসা – একাকিত্বের আধুনিক অভিধান
-
রোমান্টিক সাহিত্য2 months ago
“রাগ ও ভালোবাসার দ্বন্দ্ব: একটি আত্মনিবেদিত প্রেমের পদ্য”
-
অনুপ্রেরণার কবিতা2 months ago
একদিন এসো সময় করে – প্রেমের অপেক্ষার কবিতা
-
সৃজনশীলতা2 months ago
হৃদয়স্পর্শী বাংলা কবিতা | স্মৃতির অনামিকা ধরে এক প্রেমযাত্রা
-
অনুপ্রেরণার কবিতা2 months ago
ভালোবাসার চোখে কবিতার জন্ম হয় | প্রেম চির স্বগীয় সুখ
-
সৃজনশীলতা2 months ago
ভালোবাসার বিনিময়ে হৃদয় | একটুকরো অকৃত্রিম ভালোবাসার সন্ধানে